নীলকর-বিষধর-দংশিন কাতর-প্রজানিকর-ক্ষেমঙ্করেণ কেনচিৎ পথিকেনাভিপ্রণীতং।
ভূমিকা।
নীলকরনিকরকরে নীল-দর্পণ অর্পণ করিলাম। এক্ষণে তাঁহারা নিজ নিজ মুখ সন্দর্শন পূর্ব্বক তাঁহাদিগের ললাটে বিরাজমান স্বার্থপরতা কলঙ্ক-তিলক বিমোচন করিয়া তৎপরিবর্ত্তে পরোপকার শ্বেতচন্দন ধারণ করুন, তাহা হইলেই আমার পরিশ্রমের সাফল্য, নিরাশ্রয় প্রজাব্রজের মঙ্গল এবং বিলাতের মুখ রক্ষা। হে নীলকরগণ! তোমাদিগের নৃশংস ব্যবহারে প্রাতঃস্মরণীয় সিড্নি, হাউয়ার্ড, হল প্রভৃতি মহানুভব দ্বারা অলঙ্কৃত ইংরাজকুলে কলঙ্ক রটিয়াছে। তোমাদিগের ধনলিপ্সা কি এতই বলবতী যে তোমরা অকিঞ্চিৎকর ধনানুরোধে ইংরাজ জাতির বহুকালার্জিত বিমল যশস্তামরসে কীটস্বরূপে ছিদ্র করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছ। এক্ষণে তোমরা যে সাতিশয় অত্যাচার দ্বারা বিপুল অর্থ লাভ করিতেছ তাহা পরিহার কর, তাহা হইলে অনাথ প্রজারা সপরিবারে অনায়াসে কালাতিপাত করিতে পারিবে। তোমরা এক্ষণে দশ মুদ্রা ব্যয়ে শত মুদ্রার দ্রব্য গ্রহণ করিতেছ, তাহাতে প্রজাপুঞ্জের যে ক্লেশ হইতেছে তাহা তোমরা বিশেষ জ্ঞাত আছ; কেবল ধনলাভপরতন্ত্র হইয়া প্রকাশ করণে অনিচ্ছুক। তোমরা কহিয়া থাক যে তোমাদের মধ্যে কেহ কেহ বিদ্যাদানে অর্থ বিতরণ করিয়া থাকেন এবং সুযোগ ক্রমে ঔষধ দেন; এ কথা যদিও সত্য হয়, কিন্তু তাহাদের বিদ্যাদান পয়স্বিনী ধেনুবধে পাদুকা দানাপেক্ষাও ঘৃণিত এবং ঔষধ বিতরণ কালকূটকুম্ভে ক্ষীর ব্যবধান মাত্র। শ্যামচাঁদ আঘাত উপরে কিঞ্চিৎ টারপিন তৈল দিলেই যদি ডিস্পেন্সারি করা হয়, তবে তোমাদের প্রত্যেক কুটিতে ঔষধালয় আছে বলিতে হইবে।
দৈনিক সংবাদপত্র সম্পাদকদ্বয় তোমাদের প্রশংসায় তাহাদের পত্র পরিপূর্ণ করিতেছে, তাহাতে অপর লোক যেমত বিবেচন৷ করুক, তোমাদের মনে কখনই ত আনন্দ জন্মিতে পারে না, যেহেতু তোমরা তাহাদের এরূপ করণের কারণ বিলক্ষণ অবগত আছ। রজতের কি আশ্চর্য্য আকর্ষণ শক্তি। ত্রিংশৎ মুদ্রালোভে অবজ্ঞাস্পদ জুডাস, খৃষ্ট-ধর্ম্ম-প্রচারক মহাত্মা যীজস্কে করাল পাইলেট করে অর্পণ করিয়াছিল; সম্পাদকযুগল সহস্র মুদ্রা লাভ পরবশ হইয়া উপায়হীন দীন প্রজাগণকে তোমাদের করাল কবলে নিক্ষেপ করিবে আশ্চর্য্য কি? কিন্তু “চক্রবৎ পরিবর্ত্তন্তে দুঃখানি চ সুখানি চ।” প্রজাবৃন্দের সুখসূর্য্যোদয়ের সম্ভাবনা দেখা যাইতেছে। দাসী দ্বারা সন্তানকে স্তনদুগ্ধ দেওয়া অবৈধ বিবেচনায় দয়াশীল প্রজাজননী মহারাণী ভিক্টোরিয়া প্রজাদিগকে স্বক্রোড়ে লইয়া স্তনপান করাইতেছেন। সুধীর সুবিজ্ঞ সাহসী উদারচরিত্র ক্যানিং মহোদয় গবর্ণর জেনেরল হইয়াছেন। প্রজার দুঃখে দুঃখী, প্রজার সুখে সুখী দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন, ন্যায়পর গ্রাণ্ট মহামতি লেফ্টেনেণ্ট গবর্ণর হইয়াছেন এবং ক্রমশঃ সত্যপরায়ণ, বিচক্ষণ, নিরপেক্ষ ইডেন্, হারসেল্ প্রভৃতি রাজকার্য্যপরিচারকগণ শতদল স্বরূপে সিবিল্ সরভিস সরোবরে বিকসিত হইতেছেন। অতএব ইহা দ্বারা স্পষ্ট প্রতীয়মান হইতেছে, নীলকর দুষ্টরাহুগ্রস্ত প্রজাবৃন্দের অসহ্য কষ্ট নিবারণার্থ উক্ত মহানুভবগণ যে অচিরাৎ সদ্বিচাররূপ সুদর্শনচক্র হস্তে গ্রহণ করিবেন, তাহার সূচনা হইয়াছে।
কস্যচিৎ পথিকস্য।