মহাত্মা গান্ধী কংগ্রেসের নেতৃত্ব পরিত্যাগ করিয়াছেন-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

সংবাদ আসিয়াছে, মহাত্মা গান্ধী কংগ্রেসের নেতৃত্ব পরিত্যাগ করিয়াছেন। খবরটা আকস্মিক নয়। কিছুদিন যাবৎ এমন একটা সম্ভাবনা বাতাসে ভাসিতেছিল, মহাত্মা রাজনীতির প্রবাহ হইতে আপনাকে অপস্থত করিয়া স্বী বিশাল ব্যক্তিত্ব, বিরাট কৰ্ম্মশক্তি ও একাগ্রচিত্ত ভারতের আর্থিক, নৈতিক ও সামাজিক সমস্তার সমাধানে নিয়োজিত করিবেন। তাহাই হইয়াছে। দেখা গেল, জাতীয় মহাসমিতির সভামণ্ডপে বহু কৰ্মী, বহু ভক্ত, বহু বন্ধুজনের আবেদন-নিবেদন অনুনয়-বিনয় তাহাকে সঙ্কল্পচু্যত করিতে পারে নাই। পারার কথাও নয়। বহুবার বহু বিষয়েই প্রমাণিত হইয়াছে, অশ্রুধারার প্রবলতা দিয়া কোনদিন মহাত্মাঙ্গীকে বিচলিত করা যায় না। কারণ, তার নিজের যুক্তি ও বৃদ্ধির বড় সংসারে আর কিছু আছে, বোধ হয় তিনি ভাবিতেই পারেন না। কিন্তু তাই বলিয়া এই কথাই বলি না, এ বৃদ্ধি সামান্ত বা সাধারণ।

Mahatma Gandhi has resigned from the leadership of Congress – Sarat Chandra Chatterjee

মহাত্মার পদত্যাগ-লিখেছেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

‘কিশলয়’, ২য় বর্ষ, ৬ষ্ঠ সংখ্যা, আশ্বিন, ১৩৪৪ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত

সংবাদ আসিয়াছে, মহাত্মা গান্ধী কংগ্রেসের নেতৃত্ব পরিত্যাগ করিয়াছেন। খবরটা আকস্মিক নয়। কিছুদিন যাবৎ এমন একটা সম্ভাবনা বাতাসে ভাসিতেছিল, মহাত্মা রাজনীতির প্রবাহ হইতে আপনাকে অপস্থত করিয়া স্বী বিশাল ব্যক্তিত্ব, বিরাট কৰ্ম্মশক্তি ও একাগ্রচিত্ত ভারতের আর্থিক, নৈতিক ও সামাজিক সমস্তার সমাধানে নিয়োজিত করিবেন। তাহাই হইয়াছে। দেখা গেল, জাতীয় মহাসমিতির সভামণ্ডপে বহু কৰ্মী, বহু ভক্ত, বহু বন্ধুজনের আবেদন-নিবেদন অনুনয়-বিনয় তাহাকে সঙ্কল্পচু্যত করিতে পারে নাই। পারার কথাও নয়। বহুবার বহু বিষয়েই প্রমাণিত হইয়াছে, অশ্রুধারার প্রবলতা দিয়া কোনদিন মহাত্মাঙ্গীকে বিচলিত করা যায় না। কারণ, তার নিজের যুক্তি ও বৃদ্ধির বড় সংসারে আর কিছু আছে, বোধ হয় তিনি ভাবিতেই পারেন না। কিন্তু তাই বলিয়া এই কথাই বলি না, এ বৃদ্ধি সামান্ত বা সাধারণ। এ বুদ্ধি অসামান্ত, অসাধারণ ।

অনুরাগীগণের ঢাকিয়া রাখার বহু চেষ্টা সত্ত্বেও এ বুদ্ধি তাহার কাছে অবশেষে এ সত্য উদঘাটিত করিয়াছে যে, কংগ্রেসে তাহার প্রয়োজনীয়তা অন্ততঃ বৰ্ত্তমানের জন্য শেষ হইয়াছে, অথচ বিস্ময় এই যে, তাহার দুঃসহ প্রভুত্বে যাহারা নিজেদের উৎপীড়িত লাঞ্ছিত জ্ঞান করিয়াছেন, মহাত্মার চিস্তা ও কাৰ্য্যপদ্ধতির অনুধাবন করিতে পদে পদে যাহারা দ্বিধাগ্রস্থ হইয়াছেন, নেপথ্যে অনুযোগ-অভিযোগের যাহাদের অবধি ছিল না, তাহারাও সে কথা প্রকাশ উচ্চারণ করিতে সাহস করেন নাই।

বরঞ্চ, নানারূপে তাহার প্রসাদ-লাভের জন্য যত্ন করিয়া সেই নেতৃত্বেই তাহাকে প্রতিষ্ঠিত রাধিবার জন্য প্রাণপণ করিয়াছেন। বোধ করি শঙ্কা তাহাদের এই ষে, এত বড় ভারতে নেতৃত্ব করিবার লোক আর তাহারা খুজিয়া পাইবেন না। কিন্তু খুজিয়া না পাওয়া গেলেও এ-কথা বলিব ষে, যেখানে স্বাধীন চিন্তা স্বাধীন উক্তি স্বাধীন অভিমত বারংবার প্রতিরুদ্ধ হইয়া জাতীয় মহাসমিতিকে পৰ্বপ্রায় করিয়া আনিয়াছে, সেখানে মহাত্মার অথবা কাহারও নিরবচ্ছিন্ন সাৰ্ব্বভৌম আধিপত্য কল্যাণকর নয়। আজ মহাত্মার মত, পথ ও যুক্তির আলোচনা করিব না।

চরকায় দেশের অধোগতি প্ৰতিহত করিতে পারে কি না, অদ্ৰোহ অসহযোগে দেশের রাজনৈতিক মুক্তি আনিতে পারে কি না, আইন-অমান্ত আন্দোলনের শেষ পরিণাম কি, এ সকল প্রবৰ্ত্তিত পথে ভারত কি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নাই । একদিন কংগ্রেস আবেদন-নিবেদন অভিযোগ-অনুষোগের সুদীর্ঘ তালিকা প্রস্তুত করিয়াই নিজের কৰ্ত্তব্য শেষ করিত । বঙ্গ-বিভেদের দিনেও জাতীয় মহাসমিতি বঙ্গকে তাহার অঙ্গ বলিয়াই ভাবিতে জানিত না, বাংলার প্রশ্ন ছিল শুধু বাংলারই, বোম্বাই-আহমদাবাদ বাঙ্গালীকে এক টাকার কাপড় চার টাকার বিক্ৰী করিত, কংগ্রেগ নিরুপায় বিক্ষিত-চক্ষে শুধু চাহিয় থাকিত,-কিন্তু এই বিচ্ছিন্ন অক্ষম জাতীয় মহাসমিতিকে নিজের অদম্য অকপট বিশ্বাসের জোরে সমগ্ৰতা আনিয়া দিলেন মহাত্মা, দিলেন শক্তি, সঞ্চারিত করিলেন প্রাণ, তাহার এই দানই চিত্তে স্মরণ করিব ।

উত্তরকালে হয়ত তাহার মত ও পথ উভয়ই পরিবৰ্ত্তিত হইবে, তাহার প্রবৰ্ত্তিত আদর্শের হয়ত চিহ্নও থাকিবে না, তথাপি তিনি যাহা দিয়া গেলেন, সমস্ত পরিবর্তনের মাঝেও তাহ অমর হইয়া রহিবে। শৃঙ্খলমুক্ত ভারত ঋণ র্তাহার কোনও দিন বিশ্বত হুইবে না। আজ কংগ্রেস-প্রতিষ্ঠানেরতিনি বাহিরে আসিয়াছেন মাত্র, কিন্তু ইহাকে ত্যাগ করেন নাই, করিবার উপায় নাই। যে শিশুকে তিনি মানুষ করিয়াছেন, সে আজ বড় হুইয়াছে। তাই তাহাকে নিজের কঠিন শাসন পাশ হইতে মহাত্মা স্বেচ্ছায় মুক্তি দিলেন। ইহাতে শোক করিবার কোন কারণ ঘটে নাই,—এই যুক্তিতে উভয়েরই মঙ্গল হইবে এই আমার আশা ।


১৩৪৪ বঙ্গাব্দের আশ্বিন, ২য় বর্ষ ৬ষ্ঠ সংখ্যা কিশলয় পত্রে প্রকাশিত ।

Next Post

Mozi-one become an instrument for all the world

Tue Jul 14 , 2020
When ministers and subordinates give importance to their offices yet do not speak, close ministers fall silent, distant officials mumble under their breaths, unrest binds the heart of the people, sycophantic flattery by those at their sides surrounds superiors, and good counsel is obstructed, the state is endangered.

You May Like

Recent Updates

%d bloggers like this: