Advocatetanmoy Law Library

Legal Database and Encyclopedia

Home » Bengali Page » শ্রীশ্রীপ্রেমবিবর্ত্ত- গ্রন্থরচনা

শ্রীশ্রীপ্রেমবিবর্ত্ত- গ্রন্থরচনা

KRISHNA
চৈতন্য আমার প্রভু চৈতন্যে না ছাড়ি কভু সেই মোর প্রাণের ঈশ্বর । যে “চৈতন্য” বলি’ ডাকে উঠে কোল দিই তাকে সেই মোর প্রাণের সোদর

২ । গ্রন্থরচনা

চৈতন্যের রূপ গুণ সদা পড়ে মনে ।
পরাণ কাঁদায় দেহ ফাঁপায় সঘনে ॥১॥

কাঁদিতে কাঁদিতে মনে হইল উদয় ।

লেখনী ধরিয়া লিখি ছাড়ি’ লাজ ভয় ॥২॥

নামেতে ‘পণ্ডিত’ মাত্র, ঘটে কিছু নাই ।

চৈতন্যের লীলা তবু লিখিবারে চাই ॥৩॥

স্বরূপ গোসাঞি ও পণ্ডিত জগদানন্দ

গোসাঞি স্বরূপ বলে, “কি লিখ পণ্ডিত” ।

আমি বলি, “লিখি তাই যাহাতে পীরিত ॥৪॥

চৈতন্যের লীলাকথা যাহা পড়ে মনে ।

লিখিয়া রাখিব আমি অতি সঙ্গোপনে” ॥৫॥

স্বরূপ বলেন, “তবে লিখ প্রভুর চরিত ।

যাহা পড়ি’ জগতের হবে বড় হিত” ॥৬॥

আমি বলি, “জগতের হিত নাহি জানি ।

যাহা যাহা ভাল লাগে তাই লিখে আনি” ॥৭॥

স্বরূপ ছাড়িল মোরে বাতুল বলিয়া ।

একা বসি’ লিখি আমি প্রভু ধেয়াইয়া ॥৮॥

দেখিছি অনেক লীলা থাকি’ প্রভু-সঙ্গে ।

কিছু কিছু লিখি তাই নিজ মনোরঙ্গে ॥৯॥

মন কাঁদে, প্রাণ কাঁদে, কাঁদে দুটী আঁখি ।

যখন যাহা মনে পড়ে তখন তাহা লিখি ॥১০॥

শ্রীমহাপ্রভু ও গ্রন্থকার

প্রভু মোরে হাস্য করি’ কৈল এক দিন ।

“দ্বারকার পাটেশ্বরী তুমি ত’ প্রবীন ॥১১॥

আমি ত’ ভিখারী অতি, মোরে সেব কেন ।

কত শত সন্ন্যাসী পাইবে আমা হেন” ॥১২॥

মুঞি বলি, “রেখে দাও তোমার ছলনা ।

রাধাপদ-দাসী আমি, ও কথা বলো না ॥১৩॥

আমার রাধার বর্ণ করিয়াছ চুরি ।

ব্রজে লয়ে যাব আমি তোমায় চোর ধরি’ ॥১৪॥

আমি চাই রাধাপদ, তুমি ফেল ঠেলি’ ।

দ্বারকা পাঠাও মোরে, এই তোমার কেলি ॥১৫॥

তোমার সন্ন্যাসি-গিরি আমি ভাল জানি ।

মোদের বঞ্চিয়া রাধা সেবিবে আপনি” ॥১৬॥

বাল্য-ঘটনা-স্মরণে গ্রন্থকারের আক্ষেপোক্তি

আহা সে চৈতন্যপদ ভজনের সম্পদ

কোথা এবে গেল আমা ছাড়ি’ ।

আমাকে ফেলিয়া গেল মৃত্যু মোর না হৈল

শোকে আমি যাই গড়াগড়ি ॥১৭॥

একদিন শিশুকালে দুজনেতে পাঠশালে

কোন্দলে করিনু হাতাহাতি ।

মায়াপুরে গঙ্গাতীরে পড়িয়া দুঃখের ভারে

কাঁদিলাম এক দিন রাতি ॥১৮॥

সদয় হইয়া নাথ না হইতে পরভাত
গদাধরের সঙ্গেতে আসিয়া ।

ডাকেন, “জগদানন্দ ! অভিমান বড় মন্দ
কথা বলো বক্রতা ছাড়িয়া” ॥১৯॥

প্রভুর বদন হেরি’ অভিমান দূর করি’
জিজ্ঞাসিলাম, “এত রাত্রে কেন ।

নদীয়ার কড়া ভূমি চলি’ কষ্ট পাইলে তুমি

মো লাগি’ তোমার কষ্ট হেন” ॥২০॥

প্রভু বলে, “চল চল নিশি অবসান ভেল
গৃহে গিয়া করহ ভোজন ।

তব দুঃখ জানি’ মনে ছিলাম আমি অনশনে
শয্যা ছাড়ি’ ভূমিতে শয়ান ॥২১॥

হেনকালে গদাধর আইল আমার ঘর

দুঁহে আইনু তোমার তল্লাসে ।

ভাল হৈল মান গেল এবে নিজ গৃহে চল 

কালি খেলা করিব উল্লাসে” ॥২২॥

গদাই-চরণ ধরি’ উঠিলাম ধীরি ধীরি

প্রভু-আজ্ঞা ঠেলিতে না পারি ।

প্রভুর গৃহেতে গিয়া কিছু খাই জল পিয়া

শুইলাম দণ্ড দুই চারি ॥২৩॥

প্রাতে শচী-জগন্নাথ মোরে দিলা দুধ-ভাত

প্রভু সঙ্গে পড়িতে পাঠায় ।

পড়িয়া শুনিয়া তবে আইলাম গৃহে যবে

প্রভু মোরে গৃহে আসি’ খায় ॥২৪॥

কোন্দলের পরে প্রেম হয় যেন শুদ্ধ হেম

কত সুখ মনেতে হইল ।

প্রভু বলে, “এই লাগি’ তুমি রাগো, আমি রাগি

পরস্পর প্রেম বৃদ্ধি ভেল” ॥২৫॥
গ্রন্থকারের শ্রীচৈতন্য প্রীতি

এ হেন গৌরাঙ্গচাঁদ না ভজিলে পরমাদ
ভজিলে পরম সুখ হয় ।
দয়ার ঠাকুর তেঁহ তাঁকে কি ভুলিবে কেহ
এত দয়া দাসে বিতরয় ॥২৬॥

চৈতন্য আমার প্রভু চৈতন্যে না ছাড়ি কভু
সেই মোর প্রাণের ঈশ্বর ।
যে “চৈতন্য” বলি’ ডাকে উঠে কোল দিই তাকে
সেই মোর প্রাণের সোদর ॥২৭॥

“হা চৈতন্য প্রাণধন” না বলিল যেই জন
মুখ তার না দেখি নয়নে ।
চৈতন্যে ভুলিল যেবা যদিও সে দেবী দেবা
কুপ্রভাত তার দরশনে ॥২৮॥

চৈতন্যে ছাড়িয়া অন্য সন্ন্যাসীরে করে মান্য

তারে যষ্টি করিব প্রহার ।

ছাড়িয়া চৈতন্যকথা অন্য ইতিহাস বৃথা

বলে যেই মুখে আগুন তার ॥২৯॥

চৈতন্যের যাহে সুখ তাহে যদি ঘটে দুঃখ

চির দুঃখ ভোগ হউ মোর ।

সে যদি স্বসুখ ত্যজে যতি-ধর্ম্ম কভু ভজে

আমি তাহে দুঃখেতে বিভোর ॥৩০॥
শ্রীগৌর-গদাধর তত্ত্ব

একদিন প্রভু মোর খেলিতে খেলিতে ।

চলিল অলকাতীরে নিবিড় বনেতে ॥৩১॥

আমি আর গদাধর আছিলাম সঙ্গে ।

বকুলের গাছে শুক পক্ষী ধরে রঙ্গে ॥৩২॥

শুকে ধরি’ বলে, “তুই ব্যাসের নন্দন ।

রাধাকৃষ্ণ বলি’ কর আনন্দ বর্ধন” ॥৩৩॥

শুক তাহা নাহি বলে, বলে, “গৌরহরি” ।

প্রভু তারে দূরে ফেলে কোপ ছল করি’ ॥৩৪॥

তবু শুক “গৌর গৌর” বলিয়া নাচয় ।

শুকের কীর্ত্তনে হয় প্রেমের উদয় ॥৩৫॥

প্রভু বলে, “ওরে শুক এ যে বৃন্দাবন ।

রাধাকৃষ্ণ বল হেথা শুনুক সর্ব্বজন” ॥৩৬॥

শুক বলে, “বৃন্দাবন নবদ্বীপ হইল ।

রাধাকৃষ্ণ গৌরহরি-রূপে দেখা দিল ॥৩৭॥

আমি শুক এই বনে গৌর-নাম গাই ।

তুমি মোর কৃষ্ণ, রাধা এই যে গদাই ॥৩৮॥

গদাই-গৌরাঙ্গ মোর প্রাণের ঈশ্বর ।

আন কিছু মুখে না আইসে অতঃপর” ॥৩৯॥

প্রভু বলে, “আমি রাধাকৃষ্ণ-উপাসক ।

অন্য নাম শুনিলে আমার হয় শোক” ॥৪০॥

এত বলি’ গদাইয়ের হাতটী ধরিয়া ।

মায়াপুরে ফিরে আইল শুকেরে ছাড়িয়া ॥৪১॥

শুকে বলে, “গাও তুমি যাহা লাগে ভাল ।

আমার ভজন আমি করি চিরকাল” ॥৪২॥

মধুর চৈতন্যলীলা জাগে যার মনে ।

মোর দণ্ডবৎ ভাই তাঁহার চরণে ॥৪৩॥

শ্রীনবদ্বীপ ও বৃন্দাবন

গদাই গৌরাঙ্গে মুঞি “রাধাশ্যাম” জানি ।

ষোলক্রোশ “নবদ্বীপে” “বৃন্দাবন” মানি ॥৪৪॥

যশোদানন্দনে আর শচীর নন্দনে ।

যে জন পৃথক্ দেখে সে না মরে কেনে ॥৪৫॥

নবদ্বীপে না পাইল যেই বৃন্দাবন ।

বৃথা সে তার্কিক কেন ধরয় জীবন ॥৪৬॥

গৌর-ভজন বিনা ‘রাধাকৃষ্ণ’-ভজন বৃথা

গৌর-নাম গৌর-ধাম গৌরাঙ্গ-চরিত ।

যে ভজে তাহাতে মোর অকৈতব প্রীত ॥৪৭॥

গৌর-রূপ গৌর-নাম গৌর-লীলা গৌর-ধাম
যে না ভজে গৌড়েতে জন্মিয়া ।
রাধাকৃষ্ণ-নাম-রূপ- ধাম-লীলা অপরূপ
কভু নাহি স্পর্শে তার হিয়া ॥৪৮॥