Skip to content

Advocatetanmoy Law Library

Encyclopedia & Legal Research

Afghanistan Albania Algeria Andorra Angola Antigua & Barbuda Argentina Armenia Aruba Australia Austria Azerbaijan Bahamas Bahrain Bangladesh Barbados Belarus Belgium Belize Benin Bermuda Bhutan Bolivia Bosnia & Herzegovina Botswana Brazil British V. Islands Brunei Bulgaria Burkina Faso Burundi Cambodia Cameroon Canada Carrib. Netherlands Cayman Island Chile China Colombia Congo DRC Congo Republic Costa Rica Cote d’Ivoire Croatia Cuba Curaçao Cyprus Czechia Denmark Djibouti Dominica Dominican Republic Ecuador Egypt El alvador Estonia Ethiopia Fiji Finland France French Polyn Gabon Georgia Germany Ghana Gibraltar Greece Grenada Guadeloupe Guam Guatemala Guernsey Guinea-Bissau Guyana Haiti Honduras Hong Kong Hungary Iceland India Indonesia Iran ​Iraq Ireland Isle of Man Israel Italy Jamaica Japan Jersey Jordan Kazakhstan Kenya Kosovo Kuwait Kyrgyzstan Laos Latvia Lebanon Liberia Libya Liechtenstein Lithuania Luxembourg Macao Madagascar Malawi Malaysia Maldives Mali Malta Martinique Mauritius Mexico Moldova Monaco Mongolia Montenegro Morocco Mozambique Myanmar/Burma Namibia Nepal Netherlands New Caledonia New Zealand Nicaragua Niger Nigeria North Macedonia Northern Mariana Islands Norway Oman Pakistan Palestine Panama Papua New Guinea Paraguay Peru Philippines Poland Portugal Puerto Rico Qatar Réunion Romania Russia Rwanda Saint Lucia St Vincent & Grenadines Samoa Saudi Arabia Senegal Serbia Seychelles Sierra Leone Singapore Slovakia Slovenia Somalia South Africa South Korea Spain Sri Lanka St. Kitts & Nevis Sudan Suriname Swaziland Sweden Switzerland Syria Taiwan Tajikistan Tanzania Thailand Togo Trinidad & Tobago Tunisia Turkey Turkmenistan UAE U.S. Virgin Islands Uganda Ukraine UK United States Uruguay Uzbekistan Vatican City Venezuela Vietnam Yemen Zambia

  • Home
    • SITE UPDATES
  • Constitutions
  • Dictionary
  • Law Exam
  • Pleading
  • Index
  • Notifications
  • Indian Law
  • Articles
  • Home
  • 2021
  • February
  • 19
  • সমাজ-ধর্মের মূল্য – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
  • Bengali Page

সমাজ-ধর্মের মূল্য – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

দেশ ব্রাহ্মদের বিদ্রোহী মেচ্ছ খ্ৰীষ্টান মনে করিত্বে লাগিল। তাহারা জাতিভেদ তুলিয়া দিলেন,  আচার-বিচার মানিলেন না, সপ্তাহ অস্তে একদিন গির্জার মত সমাজগৃহে বা মন্দিরের মধ্যে জুতা-মোজা পায়ে দিয়া ভিড় করিয়া উপাসনা করিতে লাগিলেন । এত অল্প সময়ের মধ্যে র্তাহারা এত বেশি সংস্কার করিয়া ফেলিলেন যে, তাহাদের সমস্ত কাৰ্য্যকলাপই তৎকাল-প্রতিষ্ঠিত আচার-বিচারের সহিত একেবারে উল্টা বলিয়া লোকের চক্ষে পড়িতে লাগিল। ইহা যে হিন্দুর পরমসম্পদ বেদমূলক ধৰ্ম্ম, একথা কেহই বুঝিতে চাহিল না। আজও পাড়াগায়ের লোক ব্রাহ্মদের খ্ৰীষ্টান বলিয়াই মনে করে ।
1 min read

© Advocatetanmoy Law Library

  • Click to share on Facebook (Opens in new window)
  • Click to share on Twitter (Opens in new window)
  • Click to share on WhatsApp (Opens in new window)
  • More
  • Click to share on Tumblr (Opens in new window)
  • Click to share on Skype (Opens in new window)
  • Click to share on Reddit (Opens in new window)
  • Click to share on Pocket (Opens in new window)
  • Click to share on Pinterest (Opens in new window)
  • Click to share on Telegram (Opens in new window)
  • Click to share on LinkedIn (Opens in new window)
image_printPrint

সমাজ-স্বৰ্ম্মেন্ত্র মূল্য বিড়ালকে মার্জার বলিয়া বুঝাইবার প্রয়াস করায় পাণ্ডিত্য প্রকাশ যদি বা পায়, তথাপি পণ্ডিতের কাগুজ্ঞান-সম্বন্ধে লোকের যে দারুণ সংশয় উপস্থিত হইবে, তাহ আমি নিশ্চয় জানি। জানি বলিয়াই, প্রবন্ধ লেখার প্রচলিত পদ্ধতি যাই হউক, প্রথমেই ‘সমাজ’ কথাটা বুঝাইবার জন্য ইহার ব্যুৎপত্তিগত এবং উৎপত্তিগত ইতিহাস বিবৃত করিয়া, বিশদ ব্যাখ্যা করিয়া, অবশেষে ইহা এ নয়, ও নয়, তা নয়—বলিয়া পাঠকের চিত্ত বিভ্রান্ত করিয়া দিয়া গবেষণাপূর্ণ উপসংহার করিতে আমি নারাজ। আমি জানি, এ প্রবন্ধ পড়িতে যাহার ধৈর্য্য থাকিবে, তাহাকে সমাজের মানে বুঝাইতে হইবে না। দলবদ্ধ হইয়া বাস করার নামই যে সমাজ নয়—মৌরোলামাছের বাক, মৌমাছির চাক, পিপড়ার বাসা বা বীর হনুমানের মস্ত দলটাকে যে সমাজ বলে না, এ-খবর আমার নিকট হইতে এই তিনি নূতন শুনিবেন না। তবে, কেহ যদি বলেন, ‘সমাজ সম্বন্ধে মোটামুটি একটা ঝাপসা গোছের ধারণা মামুষের থাকতে পারে বটে, কিন্তু তাই বলিয়া সূক্ষ্ম অর্থ প্রকাশ করিয়া দেখাইবার চেষ্টা করা কি প্রবন্ধকারের উচিত নয় ? তাহাদের কছে আমার বক্তব্য এই যে, না। কারণ, সংসারে অনেক বস্তু আছে যাহার মোটামুট ঝাপসাধারণাটাই সত্য বস্তু-স্বশ্ব করিয়া দেখাইতে যাওয়া শুধু বিড়ম্বনা নয়, ফাকি দেওয়া !

ঈশ্বর বলিলে যে ধারণাটা মানুষের হয়, সেটা অত্যন্তই মোটা, কিন্তু সেইটাই কাজের জিনিস। এই মোটার উপরেই দুনিয়া চলে, স্বশ্নের উপর নয়। সমাজ ঠিক তাই। একজন অশিক্ষিত পাড়াগায়ের চাষা ‘সমাজ বলিয়া যাহাকে জানে, তাহার উপরেই নিৰ্ভয়ে ভর দেওয়া চলে—পণ্ডিতের সূক্ষ্ম ব্যাখ্যাটির উপরে চলে না। অন্ততঃ, আমি বোঝা-পড়া করিতে চাই এই মোটা বন্ধটিকে লইয়াই । যে সমাজ মড়া মরিলে কাধ দিতে আসে, আবার শ্রাদ্ধের সময় দলাদলি পাকায়, বিবাহে যে ঘটকালি করিয়া দেয়, অথচ বউভাতে হয়ত বাকিয় বসে ; কাজ-কর্থে, হাতে-পায়ে ধরিয়া যাহার ক্রোধ শাস্তি করিতে হয়, উৎসবে-বাসনে যে সাহায্যও করে, বিবাদও করে ; যে সহস্ৰ দোষ-কটি সত্বেও পূজনীয়—আমি তাহাকেই সমাজ বলিতেছি এবং এই সমাজ যদ্বারা শাসিত হয়, সেই বস্তুটিকেই সমাজ-ধৰ্ম্ম বলিয়া নির্দেশ করিতেছি। তবে, এইখানে রলিয়া রাখা আবশ্বক যে, যে ধৰ্ম্ম-নির্বিশেষে সকল দেশের, সকল জাতির সমাজকে শাসন করে, সেই সামাজিক ধর্থের আলোচনা করা আমার প্রবন্ধের মূখ্য উদ্বেগু নয়। কারণ, মানুষ মোটের উপর মাহবই। তাহার স্থখ-দুঃখ আচার-ব্যবহারের ধারা সৰ্ব্বদেশেই একদিকে চলে। মড়া মরিলে সব দেশেই প্রতিবেশীরা সৎকার করিতে জড় হয় ; বিবাহে সৰ্ব্বত্রই জানঙ্গ করিতে আসে ; বাপ-ষ সব দেশেই সপ্তানের পূজ্য ; বম্বোবুদ্ধের সম্মাননা সবদেশেরই নিয়ম স্বামী-স্ত্রীর সম্বন্ধ সৰ্ব্বত্রই প্রায় একরূপ ; আতিথ্য সৰ্ব্বদেশেই গৃহস্থের ধর্ম। প্রভেদ শুধু খুঁটিনাটিতে। মৃতদেহ কেহ-ব গৃহ হইতে গাড়ি-পাকী করিয়া, ফুলের মালায় আবৃত করিয়া গোরস্থানে লইয়া যায়, কেহ-বা ছেড়া মাদুরে জড়াইয়া, ধংশখণ্ডে বিটালির দড়ি দিয়া বাধিয়া, গোবরজলের সৌগন্ধ চড়াইয়া ঝুলাইতে ঝুলাইতে লই চলে ; বিবাহ করিতে কোথাও বা বরকে তরবারি প্রভৃতি পাচ হাতিয়ার বাধিয়া যাইতে হয়, আর কোথাও বা জাতিটি হাতে করিয়া গেলেই পাঁচ হাতিয়ারের কাজ হইতেছে মনে করা যায়।

বস্তুত, এইসব ছোট জিনিস লইয়াই মানুযে মানুষে বাগ-বিতণ্ডা কলহ-বিবাদ । এবং যাহা বড়, প্রশস্ত, সমাজে বাস করিবার পক্ষে যাহা একান্ত প্রয়োজনীয়, সে সম্বন্ধে কাহারও মতভেদ নাই, হইতেও পারে না। আর পারে না খলিয়াই এখনও ভগবানের রাজ্য বজায় রহিয়াছে ; মানুষ সংসারে আজীবন বাস করিয়া জীবমান্তে র্তাহারই পদাশ্রয়ে পৌঁছিবার ভরসা করিতেছে। অতএব, মৃতদেহের সৎকার করিতে হয়, বিবাহ করিয়া সস্তান প্রতিপালন করিতে হয়, প্রতিবেশীকে স্ববিধ পাইলেই খুন করিতে নাই, চুরি করা পাপ, এইসব স্থল, অথচ অত্যাবগুক সামাজিক ধৰ্ম্ম সবাই মানিতে বাধ্য ; তা তাহার বাড়ি আফ্রিকার সাহারাতেই হউক, আর এশিয়ার পাইবিরিয়াতেই হউক। কিন্তু, এইসকল আমার প্রধান আলোচ্য বিষয় নয় । অথচ, এমন কথাও বলি নাই,—মনেও করি না যে, যাহা কিছু ছোট, তাহাই তুচ্ছ এবং জালোচনার অযোগ্য। পৃথিবীর যাবতীয় সমাজের সম্পর্কে ইহার কাজে না জালিলেও বিচ্ছিন্ন এবং বিশেষ সমাজের মধ্যে ইহাদের যথেষ্ট কাজ আছে এবং সে কাজ তুচ্ছ নহে। সকল ক্ষেত্রেই এই সকল কৰ্ম্মসমষ্টি—যা দেশাচাররূপে প্রকাশ পায় তাহার যে অর্থ আছে, কিংবা সে অর্থ স্থম্পষ্ট, তাহাও নহে ; কিন্তু, ইহারাই যে বিভিন্ন স্থানে সৰ্ব্বজনীন সামাজিক ধর্মের বাহক, তাহাও কেহ অস্বীকার করিতে পারে না । বহন করিবার এই সকল বিচিত্র ধারাগুলিকে চোখ মেলিয়া দেখাই আমার লক্ষ্য ।

সামাজিক মাহুবকে তিন প্রকার শাসন-পাশ আজীবন বহন করিতে হয়। প্রথম রাজ-শাসন, দ্বিতীয় নৈতিক শাসন এবং তৃতীয় যাহাকে দেশাচার কহে তাহারই শাসন। রাজ-শাসন –আমি স্বেচ্ছাচারী দুৰ্ব্বত্ত রাজার কথা বলিতেছি না-যে রাজা স্বসত্য, প্রজাবৎসল—র্তাহার শাসনের মধ্যে র্তাহার প্রজাবৃন্দেরই সমবেত ইচ্ছা প্রচ্ছন্ন হইয়া থাকে। তাই খুন করিয়া যখন সেই শাসনপাশ গলায় বাধিয়া ফাসিকাঠে গিয়া উঠি, তখন সে র্যাসের মধ্যে আমার নিজের ইচ্ছা যে প্রকারাস্তরে মিশিয়া নাই, এ-কথা বলা যায় না । অথচ মানবের স্বাভাবিক প্রবৃত্তিবশে আমার নিজের বেলা সেই নিজের ইচ্ছাকে যখন ফাকি দিয়া আত্মরক্ষা করিতে চাই তখন ষে জাসিয়া জোর করে, সে-ই রাজশক্তি। শক্তি ব্যতীত শাসন হয় না। এমনি অপ্রকাশিত রচনাবলী নীতি এবং দেশাচারকে মান্ত করিতে যে আমাকে বাধ্য করে, সে-ই আমার সমাজ এবং সামাজিক আইন । আইনের উদ্ভব সম্বন্ধে নানা প্রকার মতামত প্রচলিত থাকলে ও মূখ্যত রাজার স্বজিত আইন যেমন রাজ-প্ৰজা উভয়কেই নিয়ন্ত্রিত করে, নীতি ও দেশাচার তেমনি সমাজ-স্বষ্ট হইয়াও সমাজ ও সামাজিক মনুষ্য উভয়কেই নিয়ন্ত্রিত করে। কিন্তু, আইনগুলি কি নিভুল ? কেহই ত এমন কথা কহে না ! ইহার মধ্যে কত অসম্পূর্ণতা, কত অন্যায়, কত অসঙ্গতি ও কঠোরতার শৃঙ্খল রহিয়াছে। নাই কোথায় ? রাজার আইনের মধ্যেও আছে, সমাজের আইনের মধ্যেও রহিয়াছে। এত থাকা সত্ত্বেও, আইন-সম্বন্ধে আলোচনা ও বিচার করিয়া যত লোক যত কথা বলিয়া গিয়াছেন—যদিচ আমি তাহাদের মতামত তুলিয়। এই প্রবন্ধের কলেবর ভারাক্রান্ত করিতে চাহি না—মোটের উপর তাহারা প্রত্যেকেই স্বীকার করিয়াছেন, আইন যতক্ষণ,—তা ভুল-ভ্রাস্তি তাহাতে যতই কেন থাকুক না, ততক্ষণ—শিরোধাৰ্য্য তাহাকে করিতেই হইবে। না করার নাম বিদ্রোহ। এবং “The righteousness of a cause is never alone sufficient justification of rebellion.” সামাজিক আইন-কামুন সম্বন্ধেও ঠিক এই কথাই খাটে না কি ?

আমি আমাদের সমাজের কথাই বলি। রাজার আইন রাজা দেখিবেন, সে আমার বক্তব্য নয়। কিন্তু সামাজিক আইন-কানুন —ভুল-চুক অন্যায়-অসঙ্গতি কি আছে না-আছে, সে না হয় পরে দেখা যাইবে ;–কিন্তু এইসকল থাকা সত্ত্বেও ত ইহাকে মানিয়া চলিতে হইবে। যতক্ষণ ইহা সামাজিক শাসন-বিধি, ততক্ষণ ত শুধু নিজের ন্যায্য দাবীর অছিলায় ইহাকে অতিক্রম করিয়া তুমুল কাও করিয়া তোলা যায় না। সমাজের অন্যায়, অসঙ্গতি, ভুল-ভ্রাস্তি বিচার করিয়া সংশোধন করা যায়, কিন্তু তাহা না করিয়া শুধু নিজের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের বলে এক এক বা দুই-চারিজন সঙ্গী জুটাইয়া লইয়া বিপ্লব বাধাইয়া দিয়া যে সমাজ-সংস্কারের স্বফল পাওয়া যায়, তাহা ত কোনমতেই বলা যায় না । ঐযুক্ত রবিবাবুর ‘গোরা বইখানি বাহারা পড়িয়াছেন, তাহারা জানেন, এই প্রকারের কিছু কিছু আলোচনা তাহাতে আছে, কিন্তু শেষ পৰ্যন্ত তাহার কি মীমাংসা করা হইয়াছে, আমি জানি না। তবে, স্কায়-পক্ষ হইলে এবং উন্ধেগু সাধু হইলে যেন দোষ নেই, এই রকম মনে হয়। সত্যপ্রিয় পরেশবাৰু সত্যকেই একমাত্র লক্ষ্য করিয়া বিপ্লবের সাহায্য করিতে পশ্চাৎপদ হন নাই । ‘সত্য কথাটি শুনিতে মন্দ নয়, কিন্তু কাৰ্যক্ষেত্রে তাহার ঠিক চেহারাটি চিনিয়া ৰাছির করা বড় কঠিন । কারণ, কোন পক্ষই মনে করে না যে, সে অসত্যের পক্ষ অবলম্বন করিয়াছে। উভয় পক্ষেরই ধারণা-সত্য তাহারই দিকে । ইহাতে আরও একটি কথা বলা হইয়াছে যে, সমাজ ব্যক্তিগত স্বাধীনতার উপর হাত দিতে পারে না। কারণ, ব্যক্তির স্বাধীনতা সমাজের জন্য সঙ্কুচিত হইতে পারে না। বরঞ্চ সমাজকেই, এ স্বাধীনতার স্থান যোগাইবার জন্য নিজেকে প্রসারিত করিতে হইবে। পণ্ডিত H. Spencer-এর মতও তাই। তবে, তিনি ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এই বলিয়া সীমাবদ্ধ করিয়াছেন যে, যতক্ষণ না তাহা অপরের তুল্য স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে। কিন্তু ভাল করিয়া দেখিতে গেলে, এই অপরের তুল্য স্বাধীনতায় যে কাৰ্য্যক্ষেত্রে কতদিকে কতপ্রকারে টান ধরে, পরিশেষে ঐ ‘সত্য কথাটির মত কোথায় যে ‘সত্য আছে—তাহার কোন উদ্দেশই পাওয়া যায় না। যাহা হউক, কথাটা মিথ্যা নয় যে, সামাজিক আইন বা রাজার আইন চিরকাল এমনি করিয়াই প্রসারিত হইয়াছে এবং হুইতেছে । কিন্তু যতক্ষণ তাহা না হইতেছে, ততক্ষণ সমাজ যদি তাহার শাস্ত্র বা অন্যায় দেশাচারে কাহাকেও ক্লেশ দিতেই বাধ্য হয়, তাহার সংশোধন না করা পৰ্য্যস্ত এই অন্যায়ের পদতলে নিজের ন্যায্য দাবী বা স্বাৰ্থ বলি দেওয়ার যেকোন পৌরুষ নাই, তাহাতে যে কোন মঙ্গল হয় না, এমন কথাও জোর করিয়া বলা চলে না । কথাটা শুনিতে হয়ত কতকটা হেঁয়ালির মত হইল। পরে তাহাকে পরিস্ফুট করিতে যত্ব করিব ।

কিন্তু এইখানে একটা মোটা কথা বলিয়া রাখি যে, রাজ-শক্তির বিপক্ষে বিদ্রোহ করিয়া তাহার বল ক্ষয় করিয়া তোলায় যেমন দেশের মঙ্গল নাই —একটা ভালর জন্য অনেক ভাল তাহাতে যেমন বিপৰ্য্যস্ত, লণ্ডভণ্ড হইয়া যায়, সমাজ-শক্তির সম্বন্ধেও ঠিক সেই কথাই খাটে । এই কথাটা কোনমতেই ভোলা চলে না যে, প্রতিবাদ এক বস্তু, কিন্তু বিদ্রোহ সম্পূর্ণ ভিন্ন বস্তু। বিদ্রোহকে চরম প্রতিবাদ বলিয়া কৈফিয়ত দেওয়া যায় না। কারণ, ইহা অনেকবার অনেক প্রকারে দেখা গিয়াছে যে, প্রতিষ্ঠিত শাসন দণ্ডের উচ্ছেদ করিয়া তাহা অপেক্ষা শতগুণে শ্রেষ্ঠ শাসন-দণ্ড প্রবর্তিত করিলেও কোন ফল হয় না, বরঞ্চ কুফলই ফলে । আমাদের ব্রাহ্ম-সমাজের প্রতি দৃষ্টিক্ষেপ করিলে এই কথাটা অনেকটা বোঝা যায়। সেই সময়ের বাঙলা দেশের সহস্র প্রকার অসঙ্গত, অমূলক ও অবোধ্য দেশাচারে বিরক্ত হইয়া কয়েকজন মহৎপ্রাণ মহাত্মা এই অন্যায়রাশির আমূল সংস্কারের তীব্র আকাঙ্ক্ষায়, প্রতিষ্ঠিত সমাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করিয়া ব্রাহ্মধর্শ্ব প্রবর্তিত করিয়া নিজেদের এরূপ বিচ্ছিন্ন করিয়া ৷ ফেলিলেন যে, তাহ নিজেদের যদি বা কাজে লাগিয়া থাকে, দেশের কোন কাজেই লাগিল না।

দেশ ব্রাহ্মদের বিদ্রোহী মেচ্ছ খ্ৰীষ্টান মনে করিত্বে লাগিল। তাহারা জাতিভেদ তুলিয়া দিলেন,  আচার-বিচার মানিলেন না, সপ্তাহ অস্তে একদিন গির্জার মত সমাজগৃহে বা মন্দিরের মধ্যে জুতা-মোজা পায়ে দিয়া ভিড় করিয়া উপাসনা করিতে লাগিলেন । এত অল্প সময়ের মধ্যে র্তাহারা এত বেশি সংস্কার করিয়া ফেলিলেন যে, তাহাদের সমস্ত কাৰ্য্যকলাপই তৎকাল-প্রতিষ্ঠিত আচার-বিচারের সহিত একেবারে উল্টা বলিয়া লোকের চক্ষে পড়িতে লাগিল। ইহা যে হিন্দুর পরমসম্পদ বেদমূলক ধৰ্ম্ম, একথা কেহই বুঝিতে চাহিল না। আজও পাড়াগায়ের লোক ব্রাহ্মদের খ্ৰীষ্টান বলিয়াই মনে করে । কিন্তু যে-সকল সংস্কার তাহারা প্রবর্তিত করিয়া গিয়াছিলেন, দেশের লোক যদি তাহা নিজেরাই দেশের জিনিস বলিয়া বুঝিতে পারিত এবং গ্রহণ করিত, তাহ হইলে আজ বাঙালী-সমাজের এ দুর্দশ বোধ করি থাকিত না । অসীম দুঃখময় এই বিবাহ-সমস্ত, বিধবার সমস্যা, উন্নতিমূলক বিলাত-যাওয়া সমস্যা সমস্তই একসঙ্গে একটা নির্দিষ্ট কূলে আসিয়া পৌছিতে পারিত। অন্তপক্ষে গতি এবং বৃদ্ধিই যদি সজীবতার লক্ষণ হয়, তাহা হইলে বলিতে হইবে, এই ব্রাহ্ম-সমাজও আজ মৃত্যুমুখে পতিত না হইলেও অকাল-বাৰ্দ্ধক্যে উপনীত হইয়াছে। – সংস্কার মানেই প্রতিষ্ঠিতের সহিত বিরোধ ; এবং অত্যস্ত সংস্কারের চেষ্টাই চরম বিরোধ বা বিদ্রোহ। ব্রাহ্ম-সমাজ এ-কথা বিস্থিত হইয়া অত্যয়কালের মধ্যেই সংস্কার, রীতি-নীতি, আচার-বিচার সম্বন্ধে নিজেদের এতটাই স্বতন্ত্র এবং উন্নত করিয়া ফেলিলেন যে, হিন্দুসমাজ হঠাৎ তীব্র ক্ৰোধ ভুলিয়া হাসিয়া ফেলিল এবং নিজেদের অবসরকালে ইহাদিগকে লইয়া এখানে ওখানে বেশ একটু আমোদ করিতেও লাগিল। হায় রে! এমন ধৰ্ম্ম, এমন সমাজ পরিশেষে কি না পরিহাসের বস্তু হইয়া উঠিল। জানি না, এই পরিহাসের জরিমানা কোনদিন হিন্দুকে মুদ-মৃদ্ধ উস্থল দিতে হইবে কি না। কিন্তু ব্রাহ্মই বল, আর হিন্দুই বল, বাঙলার বাঙালী-সমাজকে ক্ষতিগ্রস্থ হইতে হইল দুই দিক দিয়াই ।

আরও একটা কথা এই যে, সমাজিক আইন-কানুন প্রতিষ্ঠিত হয় যে দিক দিয়া, তাহার সংস্কারও হওয়া চাই সেই দিক দিয়া ; শাসন-দও পরিচালন করেন র্যাহারা, সংস্কার করিবেন তাহারাই। অর্থাৎ, মনু-পরাশরের বিধিনিষেধ মনু-পরাশরের দিক দিয়াই সংস্কৃত হওয়া চাই। বাইবেল কোরান হাজার ভাল হইলেও কোন কাজেই আসিবে না। দেশের ব্রাহ্মণেরাই যদি সমাজ-যন্ত্র এতাবৎকালে পরিচালন করিয়া আসিয়া থাকেন, ইহার মেরামতি-কাৰ্য্য তাহাদিগকে দিয়াই করাইয়া লইতে হইবে। এখানে হাইকোর্টের জজের হাজার বিচক্ষণ হওয়া সত্বেও কোন সাহায্যই করিতে পারিবেন না। দেশের লোক এ-বিষয়ে পুরুষানুক্রমে যাহাদিগকে বিশ্বাস করিতে অভ্যাস করিয়াছে—হাজার বদ-অভ্যাস হইলেও সে অভ্যাস তাহারা ছাড়িতে চাহিবে না !  এ-সকল স্থল সত্য কথা । স্বতরাং আশা করি, এতক্ষণ স্বাহ বলিয়াছি, সে সম্বন্ধে বিশেষ কাহারো মতভেদ হইবে না। যদি না হয়, তবে একথাও স্বীকার করিতে হইবে যে, মনু-পরাশরের হাত দিয়াই যদি হিন্দুর অবনতি পৌঁছিয়া থাকে ত উন্নতিও তাহাদের হাত দিয়াই পাইতে হইৰে— অস্ত কোন জাতির সামাজিক বিধি-ব্যবস্থা, তা সে যত উন্নতই হউক, হিন্দুকে কিছুই দিতে পারিবে না। তুলনায় সমালোচনায় দোষগুণ কিছু দেখাইয়া দিতে পারে, এইমাত্র।  কিন্তু যে-কোন বিধি-ব্যবস্থা হউক, যাহা মাহবকে শাসন করে, তাহার দোষগুণ কি দিয়া বিচার করা যায় ? তাহার সুখ -সৌভাগ্য দিবার ক্ষমতা দিয়া, কিংবা তাহার বিপদ ও দুঃখ হইতে পরিত্রাণ করিবার ক্ষমতা দিয়া ? Sir William Markly তাহার Elements of Law & zoo-“The value is to be measured not by the happiness which it procures, but by the misery from which it preserves us.” আমিও ইহাই বিশ্বাস করি। সুতরাং মন্থ-পরাশরের বিধি-ব্যবস্থা, আমাদের কি সম্পদ দান করিয়াছে, সে তর্ক তুলিয়া নয়, কি বিপদ হইতে রক্ষা করিয়া আসিয়াছে, শুধু সেই আলোচনা করিয়া সমাজের দোষগুণ বিচার করা উচিত। অতএব, আজও যদি আমাদের ঐ মনু-পরাশরের সংস্কার করাই আবগুক হুইয়া থাকে, তবে ঐ ধারা ধরিয়াই করা চাই। স্বৰ্গই হউক আর মোক্ষই ইউক, সে কি দিতেছে, সে বিচার করিয়া নয়, বরঞ্চ সব বিপদ হইতে আজ আর সে আমাদিগকে রক্ষা করিতে পারিতেছে না, শুধু সেই বিচার করিয়া। স্বতরাং, হিন্দু যখন উপর দিকে চাহিয়া বলেন, ঐ দেখ আমাদের ধৰ্ম্মশাস্ত্র স্বর্গের কবাট সোজা খুলিয়া দিয়াছেন, আমি তখন বলি—সেটা না হয় পরে দেখিয়ো, কিন্তু আপাতত: নীচের দিকে চাহিয়া দেখ, নরকে পড়িবার দুয়ারটা সম্প্রতি বন্ধ করা হইয়াছে কি না! কারণ, এটা ওটার চেয়েও আবখক! সহস্র বর্ষ পূৰ্ব্বে হিন্দুশাস্ত্র স্বৰ্গপ্রবেশের যে সোজা পথটি আবিষ্কার করিয়াছিলেন, সে পথটি আজও নিশ্চয় তেমনি আছে। যেখানে পৌঁছিয়া একদিন সেইরূপ আমোদ উপভোগ করিবার আশা করা বেশি কথা নয়—কিন্তু, নানা প্রকার ৰিজাতীয় সভ্যতা অসভ্যতার সংঘর্ষে ইতিমধ্যে নীচে পড়িয়া পিষিয়া মরিবার যে নিত্য নূতন পথ খুলিয়া যাইতেছে, সেগুলি ঠেকাইবার কোনরূপ বিধি-ব্যবস্থা শাস্ত্রগ্রন্থে আছে কি না, সম্প্রতি তাহাই খুজিয়া দেখ। যদি না থাকে, প্রস্তুত কর ; তাহাতে দোষ নাই ; বিপদে রক্ষা করাই ত আইনের কাজ।

কিন্তু উদ্দেশ্য ও আবশ্বক যত বড় হউক, ‘প্রস্তুত শব্দটা শুনিবামাত্রই হয়ত পণ্ডিতের দল চেঁচাইয়া উঠিবেন । আরে এ বলে কি ! এ ষে হিন্দুর শাস্ত্রগ্রন্থ! আপৌরুষেয়—অন্ততঃ ঋষিদের তৈরী, এটা শুধু হিন্দুর উপরেই ভগবানের দয়া নয়—এমনি দয়া সব জাতির প্রতিই তিনি করিয়া গিয়াছেন। ইহুদিরাও বলে তাই, খ্ৰীষ্টান মুসলমান—তারাও তাই বলে। কেহই বলে না যে, তাহাদের ধৰ্ম্ম এবং শাস্ত্রগ্রন্থ সাধারণ মামুষের সাধারণ বুদ্ধি-বিবেচনার ফল। এ-বিষয়ে হিন্দুর শাস্ত্রগ্রন্থের বিশেষ কোন একটা বিশেষত্ব আমি ত দেখিতে পাই না। সকলেরই ধেমন করিয়া পাওয়া, আমাদেরও তেমনি করিয়া পাওয়া। সে যাই হউক, আবশ্যক হইলে শাস্ত্রীয় শ্লোক একটা বদলাইয়া যদি আর একটা নাও করা যায়—নতুন একটা রচনা করিয়া বেশ দেওয়া যায়। এবং এমন কাও বহুবার হইয়াও গিয়াছে, তাহার অনেক প্রমাণ আছে । আর তাই যদি না হবে, তবে যে কোন একটা বিধি-নিষেধের এত প্রকার অর্থ, এত প্রকার তাৎপৰ্য্য পাওয়া যায় কেন ? এই ‘ভারতবর্ষ কাগজেই অনেকদিন পূৰ্ব্বে ডাক্তার ক্রযুক্ত নরেশবাবু বলিয়াছিলেন, “না জানিয়া শাস্ত্রের দোহাই দিয়ে না ।” কিন্তু আমি বলি, সেই একমাত্র কাজ, যাহা শাস্ত্র না জানিয়া পারা যায়। কারণ, জানিলে তাহার আর শাস্ত্রের দোহাই পাড়িবার কিছুমাত্র জে থাকে না। তখন “বাশবনে ডোমকানা” হওয়ার মত সে ত নিজেই কোনদিকে কুল-কিনারা খুজিয়া পায় না ; স্বতরাং, কথায় কথায় সে শাস্ত্রের দোহাই দিতেও যেমন পারে না, মতের অনৈক্য হইলেই বচনের মুগুর হাতে করিয়া তাড়িয়া মারিতে যাইতেও তাহার তেমনি লঙ্গ করে । এই কাজটা তাহারাই ভাল পারে, যাদের শাস্ত্রজ্ঞানের পুজি যৎসামান্য। এবং ঐ জোরে তাহারা আমন নিঃসঙ্কোচে শাস্ত্রের দোহাই মানিয়া নিজের মত গায়ের জোরে জাহির করে এবং নিজেদের বিদ্যার বাহিরে সমস্ত আচার-ব্যবহারই অশাস্ত্রীয় বলিয়া নিন্দ করে। কিন্তু মানবের মনের গতি বিচিত্র। তাহার আশা আকাঙ্ক্ষা অসংখ্য । তাহার মুখ-দুঃখের ধারণা বহুপ্রকার। কালের পরিবর্তন ও উন্নতি অবনতির তালে তালে সমাজের মধ্যে সে নানাবিধ জটিলতার স্বষ্টি করে। চিরদিন করিয়াছে এবং চিরদিনই করিবে। ইহার মধ্যে সমাজ যদি নিজেকে অদম্য অপরিবর্তনীয় কল্পনা করিয়া, ঋষিদের ভবিষ্যৎদৃষ্টির উপর বরাত দিয়া, নিৰ্ভয়ে পাথরের মত কঠিন হইয়া থাকিবার সঙ্কল্প করে ত তাহাকে মরিতেই হইবে। এই নিৰ্ব্ব দ্বিতার দোষে অনেক বিশিষ্ট সমাজও পৃথিবীর পৃষ্ঠ হইতে বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এ ছৰ্ঘটনা বিরল নয় ; কিন্তু, আমাদের এই সমাজ, মুখে সে যাই বলুক, কিন্তু কাজে যে সত্যই মুনিঋষির ভবিষ্যৎ-টির উপর নির্ভর করিয়া তাহার শাস্ত্র জিনিসটিকে লোহার শিকল দিয়া বাধিয়া রাখে নাই, তাহার সকলের চেয়ে বড় প্রমাণ এই যে, সে সমাজে এখনও টিকিয়া আছে। ৰাহিরের সহিত ভিতরের সামঞ্জস্ত রক্ষা করাই ত বাচিয়া থাকা ।

সুতরাং, যখন  আছে, তখন যে কোন উপায়ে, যে-কোন কলাকৌশলের দ্বারা সে যে এই সামঞ্জস্য করিয়া আসিয়াছে, তাহা ত স্বতঃসিদ্ধ । সৰ্ব্বত্রই সমস্ত বিভিন্ন জাতির মধ্যে এই সামঞ্জস্য প্রধানতঃ যে উপায়ে রক্ষিত হইয়া আসিয়াছে—তাহ প্রকাতে নূতন শ্লোক রচনা করিয়া নহে। কারণ, দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় জানা গিয়াছে যে, নব-রচিত শ্লোক বেনামীতে এবং প্রাচীনতার ছাপ লাগাইয়া চালাইয়া দিতে পারিলেই তবে ছুটিয়া চলে, না লইলে খোড়াইতে থাকে। অতএব, নিজের জোরে নূতন শ্লোক তৈরী করা প্রকৃত উপায় নহে। প্রকৃষ্ট উপায় ব্যাখ্যা। তাহা হইলে দেখা যাইতেছে—পুরাতন সভ্য-সমাজের মধ্যে শুধু গ্রীক ও রোম ছাড়া আর সকল জাতি এই দাবী করিয়াছে,—তাহাদের শাস্ত্র ঈশ্বরের দান। অথচ, সকলকেই নিজেদের বর্ধনশীল সমাজের ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্য এই ঈশ্বরদত্ত শাস্ত্রের পরিসর ক্রমাগত বাড়াইয়া তুলিতে হইয়াছে। এবং সে-বিষয়ে সকলেই প্রায় এক পন্থাই অবলম্বন করিয়াছেন— বর্তমান শ্লোকের ব্যাখ্যা করিয়া । কোন জিনিসের ইচ্ছামত ব্যাখ্যা করা যায় তিন প্রকারে। প্রথম-ব্যাকরণগত ধাতুপ্রত্যয়ের জোরে ; দ্বিতীয়–পূর্ব এবং পরবর্তী শ্লোকের সহিত তাহার সম্বন্ধ বিচার করিয়া ; এবং তৃতীয়—কোন বিশেষ দুঃখ দূর করিবার অভিপ্রায়ে শ্লোকটি স্বস্ট হইয়াছিল, তাহার ঐতিহাসিক তথ্য নির্ণয় করিয়া। অর্থাৎ চেষ্টা করিলেই দেখা যায় যে, চিরদিন সমাজ-পরিচালকের নিজেদের হাতে এই তিনখানি হাতিয়ার— ব্যাকরণ, সম্বন্ধ এবং তাৎপৰ্য্য ( positive and negative ) লইয়া ঈশ্বরদত্ত যে-কোন শাস্ত্রীয় শ্লোকের যে-কোন অর্থ করিয়া পরবর্তী যুগের নিত্য নূতন সামাজিক প্রয়োজন ও তাহার ঋণ পরিশোধ করিয়া তাহাকে সজীব রাখিয়া আসিয়াছেন। আজ যদি আমাদের জাতীয় ইতিহাস থাকিত, তাহা হইলে নিশ্চয় দেখিতে পাইতাম—কেন শাস্ত্রীয় বিধি-ব্যবস্থা এমন করিয়া পরিবর্তিত হইয়া গিয়াছে এবং কেনই বা এত মুনির এতরকম মত প্রচলিত হইয়াছে ; এবং কেনই বা প্রক্ষিপ্ত শ্লোকে শাস্ত্র বোঝাই হইয়া গিয়াছে। সমাজের এই ধারাবাহিক ইতিহাস নাই বলিয়াই এখন আমরা ধরিতে পারি ন—অমুক শাস্ত্রে অমুক বিধি কিজষ্ঠ প্রবর্তিত হইয়াছিল এবং কিজান্তই বা অমুক শাস্ত্রের দ্বারা তাহাই বাধিত হইয়াছিল। আজ স্থদুরে দাড়াইয়া সবগুলি জামাদের চোখে এইরূপ দেখায়। কিন্তু যদি তাহদের নিকটে যাইয়া দেখিবার কোনও পথ থাকিত ত নিশ্চয় দেখিতে পাইতাম—এই দুটি পরস্পর-বিরুদ্ধ বিধি একই স্থানে দাড়াইয়া আঁচড়া-আঁচড়ি করিতেছে না।

একটি হয়ত আর একটির শতবর্ষ পিছনে দাড়াইয়া ঠোঁটে আঙুল দিয়া নিশৰে হালিতেছে। প্রবাহই জীবন । যতক্ষণ বাঁচিয়া থাকে, ততক্ষণ একটা ধারা  ভিতর দিয়া অমৃক্ষণ বহিয়া যাইতে থাকে। বাহিরের প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় যাবতীয় বস্তুকে সে গ্রহণও করে, আবার ত্যাগও করে। যাহাতে তাহার আবশ্বক নাই, যে বস্তু দূষিত, তাহাকে পরিবর্জন করাই তাহার প্রাণের ধৰ্ম্ম । কিন্তু মরিলে আর যখন ত্যাগ করিবার ক্ষমতা থাকিবে না, তখনই তাহাতে বাহির হইতে যাহা আসে, তাহার কায়েম হইয়া বসিয়া যায় এবং মৃতদেহটাকে পচাইয়া তোলে। জীবন্ত সমাজ এ-নিয়ম স্বভাবতই জানে। সে জানে, যে বস্তু আর তাহার কাজে লাগিতেছে না, মমতা করিয়া তাহাকে ঘরে রাখিলে মরিতেই হইবে । সে জানে, আবর্জনার মত তাহাকে ঝাটাইয়া না ফেলিয়া দিয়া, অনর্থক ভার বহিয়া বেড়াইলে, অনর্থক শক্তিক্ষয় হইতে থাকিবে এবং এই ক্ষয়ই একদিন তাহাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলিয়া দিবে। কিন্তু জীবনীশক্তি যত হ্রাস পাইতে থাকে, প্রবাহ যতই মন্দ হইতে মন্দতর হইয়া আসিতে থাকে, যতই তাহার দুর্বলতা দুষ্টের ঘাড় ধরিয়া বাহির করিয়া দিতে ভয় পায়, ততই তাহার ঘরে প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় ভাল-মন্সের বোঝা জমাট বাধিয়া উঠিতে থাকে। এবং সেইসমস্ত গুরুভার মাথায় লইয়া সেই জরাতুর মরণোন্মুখ সমাজকে কোনমতে লাঠিতে ভর দিয়া ধীরে ধীরে সেই শেষ আশ্রয় যমের বাড়ির পথেই যাইতে হয় । ইহার কাছে এখন সমস্তই সমান। ভালও ধা, মন্দও তাই ; সাদাও যেমন, কালও তেমনই । কারণ জানিলে তবেই কাজ করা যায়, অবস্থার সহিত পরিচয় থাকিলেই তবে ব্যবস্থা করিতে পারা যায়। এখানকার এই জরাতুর সমাজ জানেই না—কিজষ্ঠ বিধি প্রবর্তিত হইয়াছিল, কেনই বা তাহা প্রকারাস্তরে নিষিদ্ধ হইয়াছিল। মানুষের কোন দুঃখ সে দূর করিতে চাহিয়াছিল, কিংবা কোন পাপের আক্রমণ হইতে সে আত্মরক্ষা করিবার জন্য এই অর্গল টানিয়া দ্বার রুদ্ধ করিয়াছিল। নিজের বিচার-শক্তি ইহার নাই, পরের কাছেও যে সমস্ত গন্ধমাদন তুলিয়া লইয়া হাজির করিবে—সে জোরও ইহার গিয়াছে। স্বতরাং, এখন এ শুধু এই বলিয়া তর্ক করে যে, এইসকল শাস্ত্রীয় বিধি-নিষেধ আমাদেরই ভগবান ও পরমপূজ্য মুনি-ঋষির তৈরী। এই তপোবনেই তারা মৃতসজীবনী লতাটি পুতিয়া গিয়াছিলেন। স্বতরাং, যদিচ প্রক্ষিপ্ত শ্লোক ও নিরর্থক ব্যাখ্যারূপ গুল্ম ও কণ্টকতৃণে এই তপোবনের মাঠটি সম্প্রতি সমাচ্ছন্ন হইয়া গিয়াছে, কিন্তু সেই পরম শ্রেয়ঃ ইহারই মধ্যে কোথাও প্রচ্ছন্ন হইয়া আছেই।

অতএব আইস, হে সনাতন হিন্দুর দল, আমরা এই হোম-ধুম-পূত মাঠের সমস্ত ঘাস ও তৃণ চক্ষু মুদিয়া নিৰ্ব্বিকারে চৰ্ব্বণ করিতে থাকি। আমরা অমৃতের পুত্ৰ—স্বতরাং সেই অমৃত-লতাটি একদিন যে আমাদের দীর্ঘ জিহায় আটক খাইবেই, তাহাতে কিছুমাত্র সংশয় নাই।  ইহাতে সংশয় না থাকিতে পারে। কিন্তু অমৃতের সকল সস্তানই কাচা ঘাস হজম করিতে পারিবে কি না, তাহাতেও কি সংশয় নাই ! কিন্তু আমি বলি, এই উদর এবং জিহবার উপর নির্ভর না করিয়া বুদ্ধি এবং দৃষ্টিশক্তির সাহায্য লইয়া কাটাগাছগুলা বাছিয়া ফেলিয়া, সেই অমৃত-লতাটির সন্ধান করিলে কি কাজটা অপেক্ষাকৃত সহজ এবং মানুষের মত দেখিতে হয় না ! ভগবান মানুষকে বুদ্ধি দিয়াছেন কিজস্ত ? সে কি শুধু আর একজনের লেখা শাস্ত্রীয় শ্লোক মুখস্ত করিবার জন্য ? এবং একজন তাহার’ কি টকা করিয়াছেন এবং আর একজন সে টীকার কি অর্থ করিয়াছেন—তাহাই বুঝিবার জন্য ? বুদ্ধির আর কি কোন স্বাধীন কাজ নাই ? কিন্তু বুদ্ধির কথা তুলিলেই পণ্ডিতেরা লাফাইয় উঠেন ; কুৰ হইয়া বারংবার চীৎকার করিতে থাকেন। শাস্ত্রের মধ্যে বুদ্ধি খাটাইবে কোনখানে ? এ যে শাস্ত্র! তাহাদের বিশ্বাস, শাস্ত্রীয় বিচার শুধু শাস্ত্ৰ-কথার লড়াই। তাহার হেতু, কারণ, লক্ষ্য, উদ্দেশু, সত্য, মিথ্যা, এ-সকল নিরূপণ করা নয়। শাস্ত্র-ব্যবসায়ীরা কতকাল হইতে যে এরূপ অবনত হীন হইয়া পড়িয়াছেন, তাহা জানিবার উপায় নাই—কিন্তু এখন তাহদের একমাত্র ধারণা যে, ব্ৰহ্মপুরাণের কুস্তির প্যাচ বায়ুপুরাণ দিয়া খসাইতে হইবে। আর পরাশরের লাঠির মার হারাতের লাঠিতে ঠেকাইতে হইবে। আর কোন পথ নাই।

সুতরাং যে ব্যক্তি এই কাজটা যত ভাল পারেন, তিনি তত বড় পণ্ডিত। ইহার মধ্যে শিক্ষিত ভদ্র ব্যক্তির স্বাভাবিক সহজ বুদ্ধির কোন স্থানই নাই। কারণ, সে শ্লোক ও ভাষ্য মুখস্থ করে নাই। অতএব, হে শিক্ষিত ভদ্র ব্যক্তি ! তুমি শুধু তোমাদের সমাজের নিরপেক্ষ দর্শকের মত মিটমিটু করিয়া চাহিয়া থাক, এবং শাস্ত্রীয় বিচারের আসরে স্মৃতিরত্ব আর তর্করত্ন কণ্ঠস্থ শ্লোকের গদক ভাজিয়া যখন আসর গরম করিয়া তুলিবেন, তখন হাততালি দাও । কিন্তু তামাশা এই যে, জিজ্ঞাসা করিলে এইসব পণ্ডিতেরা বলিতে পারিবেন না— কেন তারা ও রকম উন্মত্তের মত ওই যন্ত্রটা ঘুরাইয়া ফিরিতেছেন । এবং কি তাদের উদ্বেগু ! কেনই বা আচারটা ভাল বলিতেছেন এবং কেনই বা এটার বিরুদ্ধে এমন বাকিয়া বসিতেছেন। যদি প্রশ্ন করা যায়, তখনকার দিনে যে উদেখ বা ষে দুঃখের নিষ্কৃতি দেবার জন্ত অমুক বিধি-নিষেধ প্রবর্তিত হইয়াছিল—এখনও কি তাই আছে ; ইহাতেই কি মঙ্গল হইবে ? প্রত্যুত্তরে স্মৃতিরত্ব র্তাহার গদক বাহির করিয়া তোমার সম্মুখে যুৱাইতে থাকিবেন, যতক্ষণ না তুমি ভীত ও হতাশ হইয়া চলিয়া যাও। এইখানে আমি একটি প্রবন্ধের বিস্তৃত সমালোচনা করিতে ইচ্ছা করি। কারণ, তাহাতে আপনা হইতেই অনেক কথা পরিস্ফুট হুইবার সম্ভাবনা। প্রবন্ধটি অধ্যাপক বিভূতি ভট্টাচাৰ্য বিদ্যাভূষণ এম. এ. লিখিত “বেদে চাতুৰ্ব্বর্ণ ও আচার”  মাঘের ‘ভারতবর্ষে প্রথমেই ছাপা হইয়া বোধ করি, আমি আকৃষ্ট হইয়াছি, ইহার শাস্ত্রীয় বিচার সনাতন পদ্ধতিতে,  রসের উত্তাপে এবং উচ্ছ্বাসে । প্রবন্ধটি পড়িয়া আমার স্বৰ্গীয় মহাত্মা রামমোহন রায়ের সেই কথাটি মনে পড়িয়া গিয়াছিল।. শাস্ত্রীয় বিচারে যিনি মাথা গরম করেন, তিনি দুর্বল। এইজন্য একবার মনে করিয়াছিলাম, এই প্রবন্ধের সমালোচনা না করাই উচিত। কিন্তু ঠিক এই ধরণের আর কোন প্রবন্ধ হাতের কাছে না পাওয়ায় শেষে বাধ্য হইয়া ইহারই আলোচনাকে ভূমিকা করিতে হইল। কারণ, আমি যাহার মূল্য নিরূপণ করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছি, তাহারই কতকটা আভাস এই ‘চাতুৰ্ব্বৰ্ণ” প্রবন্ধে দেওয়া হইয়াছে । এই প্রবন্ধে ভববিভূতি মহাশয় স্বৰ্গীয় রমেশ দত্তের উপর ভারি খাপ্পা হইয়াছেন। প্রথম কারণ, তিনি পাশ্চাত্ত্য পণ্ডিতগণের পদাঙ্কামুসারী দেশীয় বিদ্বানগণের অন্যতম । এই পাপে তাহার টাইটেল দেওয়া হইয়াছে পদাঙ্কাইসারী রমেশ দত্ত—যেমন মহামহোপাধ্যায় অমুক, রায় বাহাদুর অমুক এই প্রকার। যেখানেই স্বৰ্গীয় দত্ত মহাশয় উল্লিখিত হইয়াছেন, সেইখানেই এই টাইটেলটি বাদ যায় নাই । দ্বিতীয় এবং ক্রোধের মুখ্য কারণ বোধ করি এই যে, “পূজ্যপাদ পিতৃদেব শ্ৰীহষিকেশ শাস্ত্রী মহাশয়” র্তাহার শুদ্ধিতত্বের ৪৫ পৃষ্ঠায় মহামহোপাধ্যায় শ্ৰীকাশীরাম বাচস্পতির টীকার নকল করিয়া ‘অগ্নে’ লেখা সত্বেও এই পদাঙ্কাঙ্কসারী বঙ্গীয় অনুবাদকটা ‘অগ্রে’ লিখিয়াছে। শুধু তাই নয়। আবার ‘অগ্নে’ শব্দটাকে প্রক্ষিপ্ত পৰ্য্যস্ত মনে করিয়াছে। সুতরাং এই অধ্যাপক ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয়ের নানা প্রকার রসের উৎস উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিয়াছে। যথা—“স্তম্ভিত হইবেন, লজ্জায় ঘূণায় অধোবদন হইবেন এবং যদি একবিন্দুও আধ্যরক্ত আপনাদের ধমনীতে প্রবাহিত হয়, তবে ক্রোধে জলিয়া উঠিবেন” ইত্যাদি ইত্যাদি। সব উচ্ছ্বাসগুলি লিখিতে গেলে সে অনেক স্থান এবং সময়ের আবশ্বক। সুতরাং তাহাতে কাজ নাই ; র্যাহার অভিরুচি হয়, তিনি ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয়ের মূল প্রবন্ধে দেখিয়া লইবেন । তথাপি এ-সকল কথা জামি তুলিতাম না। কিন্তু এই দুটা কথা আমি সুস্পষ্ট করিয়া দেখাইতে চাই, আমাদের দেশের শাস্ত্রীয় বিচার এবং শাস্ত্রীয় আলোচনা কিরূপ ব্যক্তিগত ও নিরর্থক উচ্ছ্বাসপূর্ণ হইয়া উঠে। এবং উংকট গোড়ামি ধমনীর আর্ধারক্তে এমন করিয়া তাণ্ডব নৃত্য বাধাইয়া দিলে মুখ দিয়া শুধু যে মান্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপ-ভাষাই বাহির হয়, তাহা নয়, এমন সব যুক্তি বাহির হয়, যাহা শাস্ত্রীয় বিচারেই বল, আর যে-কোন বিচারেই বল, কোন কাজেই লাগে না।

কিন্তু স্বৰ্গীয় দত্ত মহাশয়ের অপরাধটা কি ? পণ্ডিতের পদাঙ্ক ত পাণ্ডিতেই  অমুসরণ করিয়া থাকে! সে কি মারাত্মক অপরাধ ? পাশ্চাত্য পণ্ডিত কি পণ্ডিত নন, যে র্তাহার মতানুযায়ী হইলেই গালিগালাজ খাইতে হইবে ! দ্বিতীয় বিবাদ ঋকৃবেদের অগ্নে’ শব্দ লইয়া। এই পদাঙ্কানুসারী লোকটা কেন যে জানিয়া শুনিয়াও এ শব্দটাকে প্রক্ষিপ্ত মনে করিয়া অগ্রে’ পাঠ গ্রহণ করিয়াছিল, সে আলোচনা পরে হইবে । কিন্তু ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয়ের কি জানা নাই যে, বাঙলার অনেক পণ্ডিত আছেন যাহারা পাশ্চাত্য পণ্ডিতের পদাঙ্ক অনুসরণ না করিয়াও অনেক প্রামাণ্য শাস্ত্রগ্রন্থের মধ্যে প্রক্ষিপ্ত শ্লোকের অস্তিত্ব আবিষ্কার করিয়া গিয়াছেন, এবং তাহা স্পষ্ট করিয়া বলিতেও কুষ্ঠিত হন নাই। কারণ, বুদ্ধিপূর্বক নিরপেক্ষ আলোচনার দ্বারা যদি কোন শাস্ত্রীয় শ্লোককে প্রক্ষিপ্ত বলিয়া মনে হয়, তাহা সবসমক্ষে প্রকাশ করিয়া বলাই ত শাস্ত্রের প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা। জ্ঞানতঃ চাপাচুপি দিয়া রাখা বা অজ্ঞানতঃ প্রত্যেক অমুম্বার বিসর্গটিকে পর্যন্ত নির্বিচারে সত্য বলিয়া প্রচার করায় কোন পৌরুষ নাই। তাহাতে শাস্ত্রেরও মান্য বাড়ে না, ধৰ্ম্মকেও খাটো করা হয়। বরঞ্চ, যাহাদের শাস্ত্রের প্রতি বিশ্বাসের দৃঢ়তা নাই, শুধু তাহাদেরই এই ভয় হয়, পাছে দুই-একটা কথাও প্রক্ষিপ্ত বলিয়া ধরা পড়িলে সমস্ত বস্তুটাই ঝুটা হইয়া ছায়াবাজির মত মিলাইয়া যায়। স্বতরাং যাহা কিছু সংস্কৃত শ্লোকের আকারে ইহাতে সন্নিবিষ্ট হইয়াছে, তাহার সমস্তটাই হিন্দুশাস্ত্র বলিয়া মানা চাই-ই । বস্তুতঃ, এই সত্য ও স্বাধীন বিচার হইতেই ভ্ৰষ্ট হইয়াই হিন্দুর শাস্ত্ররাশি এমন অধঃপতিত হইয়াছে। নিছক নিজের বা দলটির সুবিধার জন্য কত যে রাশি রাশি মিথ্যা উপন্যাস রচিত এবং অনুপ্রবিষ্ট হইয়া হিন্দুর শাস্ত্র ও সমাজকে ভারাক্রান্ত করিয়াছে, কত অসত্য যে বেনামীতে প্রাচীনতার ছাপ মাখিয়া ভগবানের অনুশাসন বলিয়া প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছে, তাহার সীমা-পরিসীমা নাই। জিজ্ঞাসা করি, ইহাকে মান্ত করাও কি হিন্দুশাস্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধ করা ? একটা দৃষ্টান্ত দিয়া বলি। কুলানবের “আমিষাসবসৌরভাহীনং যন্ত মুখং ভবেৎ। প্রায়শ্চিন্তী স বজ্জশ্চি পশুরের ন সংশয়ঃ” ইহাও হিন্দুর শাস্ত্র । এ কথাও ভগবান মহাদেব বলিয়া দিয়াছেন। চব্বিশ ঘণ্টা মুখে মদমাংসের স্বগন্ধ না থাকিলে সে একটা অন্ত্যজ জানোয়ারের সামিল। অধিকারিভেদে এই শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠানের দ্বারাও হিন্দু স্বর্গের আশা করে । কিন্তু তান্ত্রিকই হউক, আর ঘাই হউক, সে হিন্দুত বটে। ইহা শাস্ত্রীয় বিধি ত বটে ! স্বতরাং স্বৰ্গবাসও ত স্বনিশ্চিত বটে। কিন্তু তবু যদি কোন পাশ্চাত্য পণ্ডিত humbug বলিয়া হাসিয়া উঠেন, তাহার হাসি থামাইবারও কোনও উপায় দেখিতে পাওয়া যায় না। অথচ হিন্দুর ঘরে জন্সিয়া শ্লোকটি মিথ্যা বলাতেও শঙ্কা আছে। কারণ, আর দশটা হিন্দু শাস্ত্র হইতে হয়ত বচন বাহির হইয়া পড়িবে, যে, মহেশ্বরের তৈরী  শ্লোকটি যদি কেহ সন্দেহ করে, তাহা হইলে সে ত সে, তাহার ৫৬ পুরুষ নরকে যাইবে। আমাদের হিন্দু শাস্ত্র ত সচরাচর একপুরুষ লইয়া বড়-একটা কথা কহে না । শ্ৰীবিভূতি ভট্টাচাৰ্য্য এম. এ মহোদয় তাহার ‘চাতুৰ্ব্বর্ণ ও আচার” প্রবন্ধের গোড়াতেই চাতুৰ্ব্বৰ্ণ সম্বন্ধে বলিতেছেন,—“যে চাতুৰ্ব্বৰ্ণ প্রথা হিন্দু জাতির একটি মহৎ বিশেষত্ব, যাহা পৃথিবীর অন্ত কোন জাতিতে দৃষ্ট হয় না—যে সনাতন স্থপ্রথা শান্তি ও স্বশৃঙ্খলার সহিত সমাজ পরিচালনার একমাত্র সুন্দর উপায়,-যাহাকে কিন্তু পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণ ও র্তাহাদের পদাঙ্কাকুসারী দেশীয় বিদ্বানগণ হিন্দুর প্রধান ভ্রম এবং তাহাদের অধঃপতনের মূল কারণ বলিয়া নির্দেশ করে,—সেই চাতুব্বর্ণ কত প্রাচীন তাহা জানিতে হইলে বেদপাঠ তাহার অন্যতম সহায় ।” এই চাতুৰ্ব্বৰ্ণ প্রসঙ্গে শুধু যদি ইনি লিখিতেন—এই কথা কত প্রাচীন, তাহ জানিতে হইলে বেদপাঠ তাহার অন্যতম সহায়, তাহা হইলে কোন কথা ছিল না ; কারণ, উক্ত প্রবন্ধে বলিবার বিষয়ই এই। কিন্তু ঐ যে-সব আনুষঙ্গিক বক্র কটাক্ষ, তাহার সার্থকতা কোনখানে ? “যে সনাতন স্বপ্রথা শান্তি ও সমাজ পরিচালনার একমাত্র স্বন্দর উপায়,—” জিজ্ঞাসা করি কেন ? কে বলিয়াছে ? ইহা যে ‘স্বপ্রথা’ তাহার প্রমাণ কোথায় ? যে কোন একটা প্রথা শুধু পুরাতন হইলেই ‘স্থ’ হয় না। ফিজিয়ানরা যদি জবাব দেয়, “মশাই, বুড়া বাপ-মাকে জ্যাস্ত পুতিয়া ফ্যালার নিয়ম যে আমাদের দেশের কত প্রাচীন, সে যদি একবার জানিতে আর আমাদের দোষ দিতে না ।” সুতরাং এই যুক্তিতে ত ঘাড় হেঁট করিয়া আমাদিগকে বলিতে হইবে, “ই বাপু, তোমার কথাটা সঙ্গত বটে । এ-প্রথা যখন এতই প্রাচীন, তখন তো কোন দোষ নাই । তোমাকে নিষেধ করিয়া অন্যায় করিয়াছি—বেশ করিয়া জ্যাস্ত কবর দাও—এমন স্ববন্দোবস্ত আর হইতেই পারে না!” অতএব শুধু প্রাচীনত্বই কোন বস্তুর ভাল-মন্দর সাফাই নয়। তবে এই যে বলা হইয়াছে যে, এই প্রথা কোন ব্যক্তিবিশেষের প্রবৰ্ত্তিত নহে, ইহা সেই পরমপুরুষের একটি অঙ্গবিলাস’ মাত্র, তাহা হইলে আর কথা চলে না। কিন্তু আমার কথা চলুক আর না চলুক, তাহাতে কিছুই আসিয়া যায় না ; কিন্তু যাহাতে যথার্থই আসিয়া যায়, অন্ততঃ আসিয়া গিয়াছে, তাহা এই যে, সেই সমস্ত প্রাচীন দিনের ঋষিদিগের অপরিমেয় অতুল্য বৃদ্ধিরাশির ভর-নৌকা এখানেই ঘ খাইয়া চিরদিনের মত ডুবিয়াছে। যে-কেহ হিন্দুশাস্ত্র আলোচনা করিয়াছেন, তিনিই বোধ করি অত্যন্ত ব্যথার সহিত অনুভব করিয়াছেন, কি করিয়া ঋষিদিগের স্বাধীন চিন্তার শৃঙ্খল এই বেদেরই তীক্ষ খঙ্গে ছিন্নভিন্ন হুইয়া পথে-বিপথে যেখানে-সেখানে যেমন-তেমন করিয়া আজ পড়িয়া আছে। চোখ মেলিলেই দেখা যায়, যখনই সেই সমস্ত বিপুল চিস্তার ধারা স্বতীস্থ বুদ্ধির অনুসরণ করিয়া ছুটিতে গিয়াছে, তখনই বেদ  তাহার দুই হাত বাড়াইয় তাহদের চুলের মুঠি ধরিয়া টানিয়া আর একদিকে ফিরাইয়া দিয়াছে। তাহাদিগকে ফিরাইয়াছে সত্য, কিন্তু পাশ্চাত্য পণ্ডিত বা তাহাদেরই পদাঙ্কামুসারী দেশীয় বিদ্বানগণকে ঠিক তেমনি করিয়া নিবৃত্ত করা শক্ত। কিন্তু সে যাই হউক, কেন যে তাহার এই প্রথমটিকে হিন্দুর ভ্রম এবং অধঃপতনের হেতু বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন, অধ্যাপক মহাশয় তাহার যখন কিছুমাত্ৰ হেতুর উল্লেখ না করিয়া শুধু উক্তিটা তুলিয়া দিয়াই ক্রোধ প্রকাশ করিয়াছেন, তখন ইহা লইয়া আলোচনা করিবার আপাততঃ প্রয়োজন অনুভব করি না । অতঃপর অধ্যাপক মহাশয় বলেন, বৈদেশিক পণ্ডিতেরা পরমপুরুষের এই চাতুব্বর্ণ্য অঙ্গবিলাসটি মানিতে চাহেন না এবং বলেন, ঋকৃবেদের সময়ে চাতুব্বর্ণ ছিল না। কারণ, এই বেদের আদ্য কতিপয় মণ্ডলে ভারতবাসিগণের কেবল দ্বিবিধ ভেদের উল্লেখ আছে । আর যদিই বা কোনস্থানে চাতুব্বর্ণ্যের উল্লেখ থাকে, তবে তাহ প্রক্ষিপ্ত। এই কথায় অধ্যাপক মহাশয় ইহাদিগকে অন্ধ বলিয়া ক্রোধে ইহাদের চোখে আঙ্গুল দিয়া দিবেন বলিয়া শাসাইয়াছেন। কারণ, আৰ্যগণের মধ্যে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈগু, শূত্র, এই চতুৰ্ব্বিধ ভেদের স্পষ্ট উল্লেখ থাকিতেও তাহা তাহাদের দৃষ্টিগোচর হয় নাই। তার পর ‘আৰ্য্যং বৰ্ণং” শব্দটার অর্থ লইয়া উভয় পক্ষের যৎকিঞ্চিৎ বচস আছে। কিন্তু আমরা ত বেদ জানি না সুতরাং এই ‘আৰ্য্যং বর্ণং শেষে কি মানে হইল ঠিক বুঝিতে পারিলাম না। তবে মোটামুটি বুঝা গেল যে, এই ‘ব্রাহ্মণ’ শব্দটা লইয়া একটু গোল আছে : কারণ, ব্ৰহ্ম’ শব্দটির ‘মন্ত্র অর্থও না কি হয় ! অধ্যাপক মহাশয় বলিতেছেন, ম্যাক্সমুলারের এত সাহস হয় নাই যে বলেন, “ছিলই না, কিন্তু প্রতিপন্ন করিতে চাহেন যে, হিন্দু চাতুব্বর্ণ বৈদিক যুগে স্পষ্টতঃ বিদ্যমান ছিল না” ; অর্থাৎ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈগু, পূত্রের ষে বিভিন্ন বৃত্তির কথা শুনা ষায়—তাহার তত বাধাবাধি বর্ণচতুষ্টয়ের মধ্যে তৎকালে আবিভূত হয় নাই—অর্থাৎ যোগ্যতা অনুসারে যে কোন লোক যে-কোন বৃত্তি অবলম্বন করিতে পারিত। আমার ত মনে হয়, পণ্ডিত ম্যাক্সমুলার জোর করিয়া ছিলই না’ না বলিয়া নিজের যে পরিচয় দিয়াছেন, তাহা দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাতেই শুধু অর্জিত হয়। কিন্তু প্রত্যুত্তরে ভববিভূতিবাৰু বলিতেছেন,—“সায়ণ চতুর্দশ শতাব্দীর লোক বলিয়া না হয় র্তাহার ব্যাখ্যা উড়াইয়া দিতে প্রবৃত্ত হইতে পার, কি সেই অপৌরুষেয় বেদেরই অন্তর্গত ঐতরেয় ব্রাহ্মণ যখন ‘ব্রাহ্মণস্পতি’ অর্থে ব্রাহ্মণপুরোহিত করিলেন, তখন তাহা কি বলিয়া উড়াইয়া দিবে ?

ব্রাহ্মণ্যশক্তি যে সমাজ ও রাজশক্তির নিয়ন্ত্রী ছিল, তাহা আমরা ঋগ্বেদেই দেখিতে পাই ।”  কিন্তু কে উড়াইয়া দিতেছে এবং দিবার প্রয়োজনই বা কি হইয়াছে, তাহা ত বুঝা গেল না! ব্রাহ্মণ পুরোহিত—বেশ ত! পুরোহিতের কাজ যিনি করিতেন, তাহাকেই ব্রাহ্মণ বলা হইত। যজন-যাজন করিলে ব্রাহ্মণ বলিত ; যুদ্ধ, রাজ্য-পালন করিলে ক্ষত্রিয় বলিত-এ কথা ত তাহারা কোথাও অস্বীকার করেন নাই। আদালতে বসিয়া যাহারা বিচার করেন, তাহাদিগকে জজ বলে, উকিল বলে। ঐযুক্ত গুরুদাসবাবু যখন ওকালতি করিতেন, তাহাকে লোকে উকিল বলিত, জজ হইলে জজ বলিত। ইহাতে আশ্চৰ্য্য হইবার আছে কি ? ব্রহ্মণ্যশক্তি বৈদিক যুগে রাজশক্তির নিয়ন্ত্রী ছিল। ইংরাজদের জামলে বড়লাট ও মেম্বারেরা তাহাই, স্বতরাং এই মেম্বারেরা রাজশক্তির নিয়ন্ত্রী ছিল বলিয়া একটা কথা যদি ভারতবর্ষের ইংরাজী ইতিহাসে পাওয়া যায় ত তাহাতে বিক্ষিত হইবার বা তর্ক করিবার আছে কি ? অথচ লাটের ছেলেরা লাটও হয় না, মেম্বার বলিয়াও কোন স্বতন্ত্ৰ জাতির অস্তিত্ব নাই। ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের প্রাচীনতা-সম্বন্ধে শুনিতে পাই, নানাপ্রকারের মতভেদ আছে। এই সম্পর্কে অধ্যাপক ম্যাক্সমুলার একটি অতিবড় অপকৰ্ম্ম করিয়াছেন—তিনি লিখিয়াছেন—“কবৰ পুত্র হইয়াও দশম মণ্ডলের অনেকগুলি মন্ত্রের প্রণেতা (?) দ্রষ্টা’ বলা তাহার উচিত ছিল! এই হেতু ভববিভূতিবাৰু ক্ষুব্ধ ও বিস্থিত হইয়া (?) চিহ্ন ব্যবহার করিয়াছেন। কিন্তু আমি বলি, বিদেশীর সম্বন্ধে অত খুটিনাটি ধরিতে নাই। কারণ, এই দশম মণ্ডলের ৮৫ স্বত্তে সোম ও স্বর্ঘ্যের বিবাহ বর্ণনা করিয়া তিনি নিজেই বলিয়াছেন, এমন পৃথিবীর মানুষের সঙ্গে “আকাশের গ্রহ-তারার সম্বন্ধ বাধিবার চেষ্টা জগতের আর কোন সাহিত্যে দেখা যায় কি ? এমন চেষ্টা জগতে আর কোন সাহিত্যে দেখা না যাইতে পারে ; কিন্তু কোন একটা উদ্দেশু সাধন করিবার অভিপ্রায়ে বৈদিক কবিকে ৰে শ্লোকটি বিশেষ করিয়া স্বষ্টি করিতে হইয়াছিল, তাহাকে বিদেশীয় কেহ যদি সেই কবির রচিত বলিয়া মনে করে, তাহাতে রাগ করিতে আছে কি ? কিন্তু সে যাই হোক, স্বক্তটি যে রূপকমাত্র, তাহ ভববিভূতিবাৰু নিজেই ইঙ্গিত করিয়াছেন। সুতরাং, স্পষ্টই দেখা যাইতেছে, অপৌরুষের বেদের অন্তর্গত সুক্তরাশির মধ্যেও এমন যুক্ত রহিয়াছে যাহা রূপকমাত্র, অতএব খাটি সত্য হইতে বাছিয়া ফেলা অত্যাবগুক। এই অত্যাবশ্বক কাজটি যাহাকে দিয়া করাইতে হইবে, সে বৰ কিন্তু বিশ্বাসপরায়ণতা বা ভক্তি নহে-সে মানুষের সংশয় এবং তর্কবুদ্ধি। অতএব ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক, তাহাকেই সকলের উপর স্থান দান করিতেই হইবে । না করিলে মানুষ মানুষই হইতে পারে না । যখন এই চন্দ্র ও স্বর্ঘ্যের বিবাহ-ব্যাপারটা খাটি সত্য ঘটনা বলিয়া গ্রহণ করিতে মানুষ ইতস্ততঃ করে নাই। আবার আজ যাহাকে সত্য বলিয়া আমরা অসংশয়ে বিশ্বাস করিতেছি, তাহাকেই হয়ত আমাদের বংশধরেরা রূপক বলিয়া উড়াইয়া দিবে। আজ আমরা জানি, সুর্য্য এবং চন্দ্র কি বস্তু এবং এইরূপ বিবাহব্যাপারটাও কিরূপ অসম্ভব ; তাই ইহাকে রূপক বলিতেছি । কিন্তু এই সুক্তই যদি আজ কোন পল্লীবাসিনী বৃদ্ধ নারীর কাছে বিবৃত করিয়া বলি, তিনি সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিতে বিন্দুমাত্রই দ্বিধা করিবেন না! কিন্তু তাহাতে কি বেদের মাহাত্ম্য বৃদ্ধি করিবে ?

বিভূতিবাবু ঋগ্বেদের ১০ম মণ্ডলের ৯ ঋকউদ্ধৃত করিতে গিয়া কঠিন হইয়া বলিতেছেন,—“ইহাতেও কাহারও সন্দেহ থাকিলে তাহার চক্ষে অঙ্গুলি দিয়া দশম মণ্ডলের ৯ ঋক বা প্রখ্যাত পুরুষস্থক্তের দ্বাদশ ঋক দেখাইয়া দিব, যথা— ব্রাহ্মণোহন্ত মুখমাসীদ্বাহ রাজন্তঃ কুতঃ। উরু তদস্ত যম্বেন্ত পদ্ভ্যা: শূত্রে অজায়ত ।” অর্থ-“সেই পরমপুরুষের মুখ হইতে ব্রাহ্মণ, বাহু হইতে রাজন্য বা ক্ষত্রিয়, উরু হইতে বৈগু এবং পদদ্বয় হইতে শূদ্র উৎপন্ন হইল। ইহার অপেক্ষ চাতুৰ্ব্বর্ণ্যের আর স্পষ্ট উল্লেখ কি আর হইতে পারে ? এই স্বত্তটির বিচার পরে হইবে। কিন্তু এ-সম্বন্ধে অধ্যাপক ম্যাক্সমুলার প্রভৃতি পাশ্চাত্য পণ্ডিতদিগের উদেশ্ব ভববিভূতিবাবু যাহা ব্যক্ত করিয়াছেন, তাহা সমীচীন বলিয়া মনে হয় না। ইনি বলিতেছেন, “আমাদের চাতুৰ্ব্বৰ্ণ প্রথার অৰ্ব্বাচীনতা প্রতিপন্ন করিয়া আমাদের ভারতীয় সভ্যতাকে আধুনিক জগৎসমক্ষে প্রচার করা পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণের প্রধান উদেষ্ঠ হইতে পারে এবং সেই উদেশ্বর বশবর্তী হইয়া  উদ্দেশ্যকে সকলেই নিন্দ করিবে, সন্দেহ নাই। কিন্তু সমস্ত উদ্দেশ্যেরই একটা অর্থ থাকে। এখানে অর্থটা কি ? একটা সত্য বস্তুর কদৰ্থ বা কু-অৰ্থ করার হেয় উপায় অবলম্বন করিয়া চাতুৰ্ব্বৰ্ণাকে বৈদিক যুগ হইতে নিৰ্ব্বাসিত করিয়া তাহাকে অপেক্ষাকৃত আধুনিক প্রতিপন্ন করায় এই পাশ্চাত্য পণ্ডিতদিগের লাভটা কি ? শুধু চাতুৰ্ব্বৰ্ণাই কি সভ্যতা ? ইহাই কি বেদের সর্বপ্রধান রত্ন ? চাতুৰ্ব্বৰ্ণ বৈদিক যুগে থাকার প্রমাণ আমরা দাখিল না করিতে পারিলেই কি জগৎসমক্ষে প্রতিপন্ন হইয়া যাইবে যে, আমাদের পিতামহের বৈদিক যুগে অসভ্য ছিল ? পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা মিশর, বেবিলন প্রভৃতি দেশের সভ্যতা ৮১° হাজার বৎসর পূর্বের বলিয়া মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করিয়াছেন। আমাদের বেলাই তাহাদের এতটা নীচতা প্রকাশ করিবার হেতু কি ? তা ছাড়া, অধ্যাপক ম্যাক্সমুলার ঋকবেদের প্রতি যে শ্রদ্ধা প্রকাশ করিয়া গিয়াছেন, তাহার সহিত বিভূতিবাবুর এই মন্তব্য খাপ খায় না। আমার ঠিক স্মরণ হইতেছে না (এবং বইখানাও হাতের কাছে নাই), কিন্তু মনে যেন পড়িতেছে, ভূমিকায় লিখিয়াছেন–জগতে আসিয়া যদি কিছু শিথিয় থাকি ত সে ঋকবেদ ও এই Critique হইতে। একটা গ্রন্থের ভূমিকায় আর একটা গ্রন্থের উল্লেখ এমন অযাচিতভাবে করা সহজ প্রদ্ধার কথা নয়। তবে যে কেন তিনি ইহাকেই খাটো করিয়া দিবার প্রয়াস করিয়া “আশাতীত সঙ্কীর্ণ অন্তঃকরণের পরিচয় দিয়াছেন”, তাহ ভববিভূতিবাবু বলিতে পারেন। যাই হউক, এই “হিন্দুজাতির প্রাণস্বরূপ” ১০ম মণ্ডলের ৯ঋকটি অপৌরুষেয় ঋকবেদেরই অন্তর্গত থাকা সত্ত্বেও পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণের পদাঙ্কাকুসারী বঙ্গীয় অনুবাদক তাহাকে প্রক্ষিপ্ত বিবেচনা করায় ভববিভূতি মহাশয় “বড়ই কাতরকণ্ঠে দেশের আশা-ভরসাস্থল ছাত্রবৃন্দ ব্রাহ্মণ তনয়গণ”কে ডাকাডাকি করিতেছেন, সেই যুক্তটি সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ আলোচনা আবশ্যক । ব্রাহ্মণ ভিন্ন আর কাহাকেও ডাক দেওয়া উচিত নয় ।

ইতিপূৰ্ব্বেই এই ১০ম মণ্ডলেরই ৮৫ যুক্ত সম্বন্ধে আলোচনা হইয়া গিয়াছে ; তাহার পুনরুল্লেখ নিম্প্রয়োজন। কিন্তু এই প্রখ্যাত ৯০ শ্লোক টি কি ? ইহা পরমপুরুষের মুখ-হাত-পা দিয়া ব্রাহ্মণ প্রভৃতির তৈরি হওয়ার কথা। কিন্তু ইহা জটাপাট, পদপাঠ, শাকল, বাস্কল দিয়া যতই যাচাই হইয়া গিয়া থাকুক না কেন, বিশ্বাস করিতে হইলে অন্ততঃ আরও শ-চারেক বৎসর পিছাইয়া যাওয়া আবশ্যক। কিন্তু সে যখন সম্ভব নহে, তখন আধুনিককালে সংসারের চোঁদ আনা শিক্ষিত সভ্য লোক যাহা বিশ্বাস করেন—সেই অভিব্যক্তির পর্যায়েই মানুষের জন্ম হইয়াছে বলিয়া মানিতে হইবে। তার পর কোটি কোটি বৎসর নানাভাবে তাহার দিন কাটিয়া, শুধু কাল, না হয় পরস্ত সে সভ্যতার মুখ দেখিয়াছে। এ-পৃথিবীর উপর মানবজন্মের তুলনায় চাতুৰ্ব্বৰ্ণ ঋগ্বেদে থাকুক আর না-থাকুক, সে কালকের কথা । অতএব হিন্দু-জাতির প্রাণস্বরূপ এই স্বক্তটিতে চাতুৰ্ব্বর্ণ্যের স্বষ্টি যেভাবে দৃষ্টি করা হইয়াছে, তাহা প্রক্ষিপ্ত না হইলেও খাটি সত্য জিনিস নয়—ব্ধপক। কিন্তু ভয়ানক মিথ্যা, তদপেক্ষ ভয়ানক সত্য-মিথ্যায় মিশাইয়া দেওয়া । কারণ, ইহাতে না পারা যায় সহজে মিথ্যাকে বর্জন করা, না যায় নিষ্কলঙ্ক সত্যকে পরিপূর্ণ শ্রদ্ধায় গ্রহণ করা। অতএব, এই রূপকের মধ্য হইতে নীর ত্যজিয়া ক্ষীর শোষণ করা বুদ্ধির কাজ। সেই বুদ্ধির তারতম্য-অনুসারে একজন যদি ইহার প্রতি অক্ষরটিকে অত্রাস্ত সত্য বলিয়া মনে করে এবং আর একজন সমস্ত যুক্তটিকে মিথ্যা বলিয়। ত্যাগ করিতে উষ্ঠত হয়, তখন অপৌরুষেয়ের দোহাই দিয়া তাহাকে ঠেকাইবে কি করিয়া ? সে যদি কহিতে থাকে, ইহাতে ব্রাহ্মণের ধৰ্ম্ম, ক্ষত্রিয়ের ধৰ্ম্ম,  ৰৈপ্তের ধৰ্ম্ম, পূত্রের ধৰ্ম্ম—এই চারি প্রকার নির্দেশ করা হইয়াছে, জাতি বা মানুষ নয় অর্থাৎ সেই পরমপুরুষের মুখ হইতে যজন, যাজন, অধ্যয়ন, অধ্যাপনা প্রভৃতি এক শ্রেণীর বৃত্তি ; তাহাকেই ব্রহ্মণ্যধৰ্ম্ম বা ব্রাহ্মণ বলিবে । হাত হইতে ক্ষত্রিয়–অর্থাৎ বল বা শক্তির ধৰ্ম্ম । এই প্রকার অর্থ যদি কেহ গ্রহণ করিতে চাহে, তাহাকে ‘না’ বলিয়া উড়াইয়া দিবে কি করিয়া ? কিন্তু এইখানে একটা প্রশ্ন করিতে চাহি। এই যে এতক্ষণ ধরিয়া ঠোকাঠুকি কাটাকাটি করিয়া কথার শ্রাদ্ধ হয় গেল, তাহা কাহার কি কাজে আসিল ? মনের অগোচর ত পাপ নাই ? কতকটা বিদ্যা প্রকাশ করা ভিন্ন কোন পক্ষের আর কোন কাজ হইল কি ?

পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা যদি বলিয়াই ছিলেন, চাতুৰ্ব্বৰ্ণ হিন্দুর বিরাট ভ্রম এবং অধঃপতনের অন্ততম কারণ এবং ইহা ঋকবেদের সনয়েও ছিল না—তবে ভববিভূতিবাবু যদি প্রতিবাদই করিলেন, তবে শুধু গায়ের জোরে তাদের কথাগুলা উড়াইয়া দিবার ব্যর্থ চেষ্টা না করিয়া কেন প্রমাণ করিয়া দিলেন না, এ-প্রথা বেদে আছে ! কারণ, বেদ অপৌরুষেয়, তাহার ভুল হইতে পারে না—জাতিভেদ প্রথা স্বশৃঙ্খলার সহিত সমাজপরিচালনের যে সত্য-সতাই একমাত্র উপায়, তাহা এই সব বৈজ্ঞানিক, সামাজিক এবং ঐতিহাসিক নজির তুলিয়া দিয়া প্রমাণ করিয়া দিলাম। তবে ত তাল ঠুকিয়া বলা যাইতে পারিত, এই দেখ, আমাদের অপৌরুষেয় বেদে যাহা আছে, তাহা মিথ্যাও নয় এবং তাহাকে অবলম্বন করিয়া হিন্দু ভুলও করে নাই, অধঃপথেও যায় নাই। তা যদি না করিলেন, তবে তাহারা জাতিভেদকে ভ্রমই বলুন, আর ঘাই বলুন, সে-কথার উল্লেখ করিয়া শুধু শ্লোকের নজির তুলিয়া উহাদিগকে কানা বলিয়া, সঙ্কীর্ণচৈত বলিয়া, আর রাশি রাশি হা-হুতাশ উচ্ছ্বাসের প্রবাহ বহাইয়া দিয়াই কি কোন কাজ হইবে ? বেদের মধ্যেও যখন রূপকের স্থান রহিয়াছে, তখন বুদ্ধি-বিচারেরও অবকাশ আছে। স্বতরাং শুধু উক্তিকেই অকাট্য যুক্তি বলিয়া দাড় করানো যাইবে না। আমি এই কথাটাই আমার এই ভূমিকায় বলিতে চাহিয়াছি। অত:পর হিন্দুর সর্বশ্রেষ্ঠ সংস্কার বিবাহের কথা। ইনি প্রথমেই বলিতেছেন, “হিন্দুর এই পবিত্র বিবাহপদ্ধতি বহু সহস্ৰ বৎসর পূৰ্ব্বে,—ঋগ্বেদের সময়ে যেভাবে নিম্পন্ন হইত, আজও—একালের বৈদেশিক সভ্যতার সংঘর্বেও তাহা অনুমাত্র পরিবর্তিত হয় নাই।” অকুমাত্রও পরিবর্তিত ষে হয় নাই, তাহা নিম্নলিখিত উদাহরণে স্বম্পষ্ট করিয়াছেন— “তখনও বরকে কন্যার গৃহে গিয়া বিবাহ করিতে হইত,—এখনও তাহা হইয়া থাকে। আবার বিবাহের পর শোভাযাত্রা করিয়া বহুবিধ অলঙ্কারভূষিত কস্তাকে লইয়া শ্বস্তর-দত্ত নানাবিধ যৌতুক সহিত তখনও যেমন বর গৃহে প্রত্যাগমন করিতেন, এখনও সেইরূপ হইয়া থাকে।  এই সকল আচার-ব্যবহার বৈদিক কালে প্রচলিত ছিলই । ভালই। কিন্তু এই যে বলিয়াছেন—বহু সহস্ৰ বৰ্ষ পূর্বের বিবাহপদ্ধতি যেমনটি ছিল, আজও এই বৈদেশিক সভ্যতার সংঘর্ষেও ঠিক তেমনটি আছে, “অণুমাত্র পরিবর্তিত হয় নাই—ইহার অর্থ হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিলাম না। কারণ, পরিবর্তিত না হওয়ায় বলিতেই হইবে, আজকালকার প্রচলিত বিবাহ-পদ্ধতিটিও ঠিক তেমনি নির্দোষ এবং ইহাই বোধ করি বলার তাৎপৰ্য্য ! কিন্তু এই তাৎপৰ্য্যটির সামঞ্জস্ত রক্ষিত্ত হইয়াছে বলিয়া মনে হইতেছে না । বলিতেছে—“কন্ত-সম্প্রদানের ব্যবস্থা ছিল । কিন্তু কন্যার বয়সের কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ নাই ।” অর্থাৎ বুঝা যাইতেছে, আজকাল যেমন মেয়ের বয়স বারো উত্তীর্ণ হইয়া তেরোয় পড়িলেই ভয়ে এবং তাবনায় মেয়ের বাপ-মায়ের জীবন দুর্ভর হয়ে উঠে এবং পেটের ভাত চাল হইতে থাকে, তখনকার বৈদিক কালে এমনটি হইতে পারিত না । ইচ্ছামত বা স্থবিধামত মেয়েকে যে-কোন বয়সেই হউক, পাত্রস্থ করা যাইতে পারিত। আর এমন না হইলে কন্যা শ্বশুরবাড়ি গিয়াই যে শ্বশুর-শাশুড়ী, নন-দেবরের উপর প্রস্তু হইয়া বসিয়া খাইত, সে নেহাত কচা খুকীটির কৰ্ম্ম নয়  – রাগ দ্বেষ অভিমান—গৃহিণীপনার ইচ্ছা প্রভৃতি ষে সেকালে ছিল না—বউ বাড়ি চুকিবামাত্রই তাহার হাতে লোহার সিন্দুকের চাবিটি শাশুড়ী-ননদে তুলিয়া দিত, সেও ত মনে করা যায় না । যাহা হউক, ভববিভূতিবাবুর নিজের কথা মত বয়সের কড়াকড়ি তখন ছিল না। কিন্তু এখন এই কড়াকড়িটা যে কি ব্যাপার, তাহা আর কোন ব্যক্তিকেই বুঝাইয় বলিবার আবশ্বকতা নাই বোধ করি । দ্বিতীয়তঃ ইনি বলিয়াছেন যে, “এইসকল উপঢৌকন কেহ যেন বর্তমানকালে প্রচলিত কদৰ্য্য পণপ্রথার প্রমাণরূপে গ্ৰহণ না করেন। এগুলি কন্যার পিতার স্বেচ্ছাকৃত, সামর্থ্যান্থরূপ দান বুঝিতে হইবে।”  কিন্তু এখনকার উপঢৌকন যোগাইতে অনেক পিতাকে বাস্তুভিটাটি পৰ্য্যন্ত বেচিতে হয়। সে সময় কিন্তু অপৌরুষেয় ঋকুমন্ত্র মেয়ের বাপেরও এক তিল কাজে আসে না, বরের বাপকেও বিন্দুমাত্র ভয় দেখাইতে, তাহার কর্তব্যনিষ্ঠ হইতে  প্রতিপন্ন করিতেছেন যে, যে-মেয়ের ভাই ছিল না, সে মেয়ের সহিত তখনকার দিনে বিবাহ নিষিদ্ধ ছিল। এবং বলিতেছেন, অথচ, আজকাল এই বিবাহই সৰ্ব্বাপেক্ষা সস্তোষজনক । কারণ, বিষয়-আশয় পাওয়া যায়। যদিচ, এতগুলি শাস্ত্রীয় শ্লোক ও তাহার অর্থাদি দেওয়া সত্বেও মোটাবুদ্ধিতে আসিল না, ভাই না হওয়ায় বোনের অপরাধ কি এবং কেনই বা সে ত্যাজ্য হইয়াছিল, কিন্তু এখন যখন ইহাই সৰ্ব্বাপেক্ষা বাঞ্ছনীয়, তখন ইহাকেও একটা পরিবর্তন বলিয়াই গণ্য করিতে হইবে। তবেই দেখা যাইতেছে, (১) তখন মেয়ের বিবাহের বয়স নির্দিষ্ট ছিল না, এখন ইহাই হইয়াছে বাপ-মায়ের মৃত্যুবাণ । (২) স্বেচ্ছাকৃত উপঢৌকন দাড়াইয়াছে বাস্তুভিটা বেচা এবং (৩) নিষিদ্ধ কন্যা হইয়াছেন সবচেয়ে-স্বসিদ্ধ মেয়ে। বিভূতিবাবু বলিবেন, তা হোক না, কিন্তু এখনও ত বরকে সেই মেয়ের বাড়িতে গিয়াই বিবাহ করিতে হয় এবং শোভাযাত্রা করিয়া ঘরে ফিরিতে হয়। এ ত আর বৈদেশিক সভ্যতার সংঘর্ষ একতিল পরিবর্তিত করিতে পারে নাই ? তা পারে নাই সত্য, তবুও মনে পড়ে, সেই যে কে একজন খুব খুশী হইয়া বলিয়াছিল,— জন্নবস্ত্রের দুঃখ ছাড়া আর দুঃখ আমার সংসারে নেই!” আবার ইহাই সব নয়। “বিবাহিত পত্নী যে-গৃহের প্রধান অঙ্গ,—গৃহিণীর অভাবে ষে গৃহ জীর্ণারণ্যের তুল্য, তাহা ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয় “গৃহিণীং গৃহমুচ্যতে”— এই প্রসিদ্ধ প্রবাদবাক্য হইতে সম্প্রতি অবগত হইয়াছেন। আবার ঋগ্বেদ পাঠেও প্রবাদটির স্বপুরাতনত্বই সুচিত হইয়াছে। যথা— ৩ ম, ৫৩ স্থ, ৪ ঋক্ ] “জায়েদস্তং মঘবস্তসেছু যোনিঃ” অর্থাৎ, হে মঘবন–জায়াই গৃহ, জায়াই যোনি । সুতরাং বহু প্রাচীনকাল হইতেই হিন্দুগণ রমণীগণের প্রতি আদর ও সম্মান প্রদর্শন করিয়া আসিতেছেন। আবার র্তাহাদের পত্নী কিরূপ মঙ্গলময়ী, তাহা—“কল্যাণীর্জায়া তে” [ ত ম, ৫৩ স্থ, ৬ ঋক্ ] হইতে স্পষ্টই প্রতীত হয়। স্বতরাং— “কিন্তু, তথাপি, বৈদেশিকগণ কেন যে হিন্দুগণের উপর রমণীগণের প্রতি কঠোর ব্যবহারের জন্য দোষারোপ করেন, তাহ। তাহারাই জানেন ।” এই সকল প্রবন্ধ ও মতামতের যে প্রতিবাদ করা আবশ্বক সে কথা অবশ্ব কেহই বলিবেন না। আমিও একেবারেই করিতাম না, যদি না ইহা আমার প্রবন্ধের ভূমিক-হিসাবেও কাজে লাগিত। তথাপি প্রতিবাদ করিতে আমি চাহি না—কিন্তু ইহারই মত “বড়ই কাতরকণ্ঠে” ডাকিতে চাহি—ভগবান! এই সমস্ত শ্লোক আওড়ানোর হাত হইতে এই হতভাগ্য দেশকে রেহাই দাও । ঢের প্রায়শ্চিত্ত করাইয়া লইয়াছ, এইবার একটু নিষ্কৃতি দাও ।


First published in ভারতবর্ষ, জ্যৈষ্ঠ ১৩২৩

image_printPrint

Related

Tags: BengaliEssay BrahmaSamaj Saratchandra Society

Continue Reading

Previous: গুপি গাইন ও বাঘা বাইন-উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী-Gupi Gyne Bagha Byne-Upendrakishore Raychaudhury
Next: চরিত্র-গঠন ও মানসিক উন্নতি-সুভাষচন্দ্র বসু (1926)

Latest

  • Interpretation NO.748  [ Same-Sex Marriage Case ]-Judicial Yunan-24/05/2017
  • Fake letters of St Paul to Seneca and fake letters of Seneca to St Paul (1863)
  • পতিতার আত্মচরিত – কুমারী শ্রীমতী মানদা দেবী প্রণীত (Autobiography of a prostitute by Manada Devi-1929)
  • U.S strategy towards sub-saharan Africa-08/08/2022
  • Epistle of Epicurus to Herodotus (260BCE)

CONSTITUTION IPC CRPC CPC EVIDENCE DV POCSO IT IP TP JUVENILE CONTRACT SPECIFIC RELIEF CONSUMER ARBITRATION COMPANY LIMITATION FAMILY LAWS POLLUTION CONTROL BANKING INSURANCE

DOCUMENTS GLOSSARIES JUDGMENTS

  • E-Books 2022  More Documents

Search Google

  • BIBLIOGRAPHY
  • HISTORY
  • PHILOSOPHY
  • RELIGION
  • ENVIRONMENT
  • MEDICAL
  • Contact Us
  • About
  • Disclaimers
  • RSS
  • Privacy Policy
Encyclopedia & Legal Research-Database Support.... Copyright © by Advocatetanmoy.