আমার দুইগ্গ্যা
মিহির ব্যানার্জী
নেংটি পরে আদুল গায়ে–
কি নাম তোর খুকি?
দুপুর রোদে কই যাস তুই
মারিস্ উকি ঝুকি!
হেই বাবু, তুই জানিস না মুই
বাপ ডাকত বুড়ি,
মা ডাকত দুইগ্গ্যা বলে,
কথার ফুলঝুরি।
কোথায় থাকিস, একলা কেন–
মা বাপ তোর কৈ?
দুইগ্গ্যা হাসে, কেউ নাই মোর–
একলা থাকি মুই।
হুই দুরে দ্যাখ তেপল ঢাকা
ঝুপড়ি ভাঙা চোরা,
রেতের বেলা ওক্খেনে থুই
দিনে বাড়ী বাড়ী ঘোরা,
বাপটা মাকে রোজ কেলাত
পাঁইট গ্যাঁজা চাই -ই,
ফট্ কইরে বাপ মইরে গেল
মা টা কাঁদে হাঁই -হাঁই।
ফটফটি বাবু আইসতো রোজই
ট্যাকা দিত মার হাতে,
মোর মা টাও চইলে গেল
ফটফটি বাবু সাথে।
হ্যাঁরে মা দুইগ্গ্যা কে খেতে দেয়
কি কাজ করিস বল,
হুই বাবু, রোজ পাথ্থর ভাঙি–
জল তুলি টিউকল,
কাইজ করে রোজ বিশ ট্যাকা পাই
খাবার কিন্যা খাই,
ঝুঁঝকো থেকেই বাড়ী বাড়ী ঘুরি
রেতের বেলা ঘুমাই।
চল তুই আজ আমার বাড়ীতে
আমার সাথে খাবি,
বিকাল বেলায় শপিং মলে যাব
নতুন পোষাক পাবি।
হেই বাবু ,তোর কাজ কাম লাই
যাও না এবার চলে,
তিন বাড়ী জল তুলতে হবেই
গাল দেবে দেরী হলে ।
কাজ করে মুই পয়সা কামাই
তোর বাড়ী খাব কেনে?
লোতুন পোষাক আমাদের লয়
মোকে সক্কলেই চেনে।
পূজো এসে গেছে, ঠাকুর দেখবি?
না বাবু, সময় কৈ?
বড় নোকদের দূগ্গা পূজোয়
হ্যাটা খেতে যাব মুই?
হেই বাবু ,মোর নামই তো দুইগ্গা
মুই দশভূজা কুইন্যা,
এক হাতে মোর হাতুরি -বালতি
আর হাতে ভাসে বন্যা ।

ঢ্যাং কুড়া কুড় বাদ্যি বাজে
আমার দুইগ্গা ব্যাস্ত কাজে,
কেলো র ব্যাটা কার্তিক গনেশ
বাদ্যি শুনে মরছে লাজে,
এমনি হাজার হাজার দুইগ্গা
সকাল সন্ধ্যা লড়াই করে,
এই বাংলার কোনায় কোনায়
ভাত ও ছাদের জন্যে মরে।
রং- বাহারী আলোর নীচে,
নিকষ কালো অন্ধকার,
আমার দুইগ্গ্যা হাসবে যবে
মায়ের পূজা হবে সবার।
You must be logged in to post a comment.