সচল- অচল
অচল ভট্টাচার্য ( প্রয়াণ ১ লা এপ্রিল ১৯৯১ )

বহু বছর আগের কথা। নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন, হাওড়া শাখার একটি সভায় আমন্ত্রিত অথিতি হয়ে এসেছিলেন শ্রী প্রতাপ চন্দ্র চন্দ্র। অচল বাবু তখন সম্পাদক। প্রতাপ বাবু তার ভাষণের মাঝে বলেছিলেন — এতো সচল মানুষের নাম অচল কি করে হয় আমি জানি না। তা যাই হোক আমি কামনা করি উনি যে সাধনায় ব্রতী তাতে চিরকাল অচল থাকুন। উনি হাওড়ার সচল – অচল। সত্যি তিনি তার সাধনায় আমৃত্যু অচল ছিলেন। তাই ১লা এপ্রিল ১৯৯১ সেদিনও তার লেখার ঘরে পরে আছে স্তুপকৃত পুঁথিপত্র নোটবই কাগজ কলম কালি শুধু নেই তিনি। যাবার সময় বলে গেলেন — থাক ফিরে এসে ধরবো। ফেরা আর হয় নি। অচল বাবুর জন্ম কলকাতার হরিঘোষ স্ট্রিট এ মতুলালয়ে ১৯৩৩ । শৈশব কৈশোর যৌবন কেটেছে জোড়াবাগান থানার কাছে মথুর সেন গার্ডেন লেন। শিক্ষা সিটি কলেজ অফ কমার্স এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাণিজ্য বিভাগ। পেশা, চাকুরী, আয়কর আধিকারিক। অবসরের আগে পোস্টিং ছিলেন মালদায়, আই টি ও মালদা। ১৯৭০ সালে জোড়াবাগানের ভাড়া বাড়ী ছেড়ে সপরিবারে চলে এলেন হাওড়া শিবপুরে বাড়ী করে। নিজগুনে হয়ে গেলেন হাওড়ার অতি আপনজন। ছাত্রাবস্থা থেকেই শুরু সাহিত্য সাধনা ।সিটি কলেজের অধ্যাপক দ্বিজেন্দ্রলাল মুখোপাধ্যায় প্রকাশ করতেন বাণিজ্য – পত্রিকা আর্থিক প্রসঙ্গ ইংরাজি ভার্সন ইকোণমিক স্টাডিস।
অচল বাবু ছিলেন নিয়মিত লেখক ।দেখালেন নিরস বিষয় কে সরস করে পরিবেশনের মুন্সীয়ানা। বন্ধু জগৎ রঞ্জন মজুমদার এর ছিল নাটকের দল, আর সাহিত্য পত্রিকা সাহিত্য ভারতী। তাতে অচল বাবু লিখতেন গল্প প্রবন্ধ নাটক । ওনার নাটক বহুবার মঞ্চস্থ হয়েছে । হাওড়ায় বাসা বদল অচল বাবুর জীবনের টার্নিং পয়েন্ট এ মানতেই হবে। সে সময় হাওড়ার প্রত্যেকটি পত্রপত্রিকা সম্পাদক লেখক গোষ্ঠী, এবং হাওড়ার শিক্ষা সাহিত্য জগতের সকলের সঙ্গে ওনার আত্মিক যোগ ছিল । হাওড়া কলকাতার বহু সাহিত্য প্রতিষ্ঠানের উনিছিলেন প্রাণপুরুষ।এ তালিকা অতি দীর্ঘ। অচল ভট্টাচাৰ্যকে সর্বাধিক পরিচিতি দিয়েছিলো হাওড়া জেলার ইতিহাস। অচল বাবুর আগে ব্যক্তিগত উদ্যোগে হাওড়ার ইতিহাস নিয়ে চর্চা হয়েছে, যেমন সি এন ব্যানার্জীর হাওড়া পাস্ট এন্ড প্রেসেন্ট, বা অন্নদা প্রসাদ চ্যাটার্জীর শিবপুর কাহিনী, তারাপদ সাঁতরার হাওড়ার পুরাকীর্তি, প্রভাস চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এর বালী গ্রামের ইতিহাস।এই ধরণের বেশ কিছু গ্রন্থ। তবে সেগুলি ছিল আঞ্চলিক ইতিহাস, বা নির্দিষ্ট বিষয় ভিত্তিক ইতিহাস।
সমগ্র হাওড়া জেলাকে পটভূমি করে , এবং সকল বিষয়কে সূচী করে সামগ্রিক হাওড়া জেলার ইতিহাস, প্রথম প্রণেতা শ্রী অচল ভট্টাচার্য। হাওড়া জেলার ইতিহাস ১ম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৯৮০ সালে। বিষয় সূচী ইতিহাস ভূগোল অর্থনীতি ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষা লোকপ্রকৃতি।দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৯৮২ বিষয় সূচী প্রশাসনের ক্রোমোবিকাশ, পথ পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা । স্বাস্থ, ওআঞ্চলিক কথা, স্মরণীয় ঘটনা বরণীয় নাম,কয়েকটি প্রাচীন বংশ।উনি হাওড়ার অনেক দুষ্প্রাপ্য প্রাচীন চিত্র ও মানচিত্র সংগ্রহ করে ছিলেন । সেগুলি একত্রিত করে প্রকাশ হয় বিদেশীদের দৃষ্টিতে হাওড়া / হাওড়া থ্রু দা লেন্স অফ ফরেনার্স। প্রকাশকাল ১৯৮৩। পুস্তিকা ঊনবিংশ শতাব্দীর নবচেতনায় হাওড়ার ভূমিকা ।১৯৮৪। দুই বাগানের গল্প , শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ভোট বাগান মঠ।১৯৮৪। সে সময়ের পেক্ষিতে কাজটা ছিল অত্যন্ত কঠিন ও পরিশ্রমের। কারণ তথ্য ও সংবাদ সংগ্রহ করার আধুনিক প্রযুক্তি সে সময় ছিল না।
ইতিহাস রচনার উপাদান হিসাবে উনি সংগ্রহ করে ছিলেন প্রচুর সরকারি গেজেটিয়ার, দেশি বিদেশি প্রচুর রেফারেন্স বই , হাওড়ার ওপর সে সময় প্রকাশিত প্রচুর বই , স্কুল কলেজ ক্লাব এর স্মরিনিকা, হাওড়ার প্রাচীন চিত্র ও মানচিত্র । শুধু শহর নয় প্রত্যন্ত গ্রামেও উনি নিজে গিয়ে প্রাচীন মানুষ ও পরিবার এর সংবাদ সংগ্রহ করে ছিলেন । অচল বাবুর ক্ষীণ দৃষ্টি ওনাকে বেঁধে রাখতে পারে নি। হাওড়া জেলার ইতিহাস প্রকাশের অল্প সময়ের মধ্যেই নিঃশেষ হয়ে যায়। দ্বিতীয় সংস্কারণের কাজ শুরু করেছিলেন , কিন্তু হটাৎ চলে যাওয়ায় তা আর হয়ে উঠে নি। বইটি পুনপ্রকাশের জন্য বহু বছর ধরে বহু মানুষ বলেছেন । আনন্দের কথা বিশিষ্ট হাওড়া চর্চাকারী শ্রী শ্যামল বেরা মহাশয় বইটি পুন : প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন । হাওড়া বাসী এখন তারই অপেক্ষায়।
অচল ভট্টাচার্য প্রনীত গ্রন্থ তালিকা :–
ইতিহাস : —
হাওড়া জেলার ইতিহাস দুই খণ্ড বিদেশীদের দৃষ্টিতে হাওড়া / হাওড়া থ্রু দা লেন্স অফ ফরেনার্স । ঊনবিংশ শতাব্দীতে নবজাগরণে হাওড়ার ভূমিকা। দুই বাগানের গল্প, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ভোট বাগান মঠ।
নাটক :–
তিনটি একাঙ্ক নাটক, ছোটদের নাটক , রূপকথার নাটক, দেশের ডাক, শরৎচন্দ্র, সুকান্ত, কলকাতা কলকাতা, শাঁখের করাত।
উপন্যাস :–
গন্ডায়নার পশ্চিমে, সন্ধি রহস্য।
গল্প সংকলন :—
গল্প হলেও ইতিহাস, অন্ধকারের জাহাজ।
হাওড়া জেলার ইতিহাস
অচল ভট্টাচার্য বিষয় সুচী প্রথম অধ্যায় -ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্য।য় -ভূগোল তৃতীয় অধ্যায় -অর্থনীতি চতুর্থ অধ্যায় -শিক্ষা পঞ্চম অধ্যায় -ভাষা! ও সাহিত্য ষষ্ঠ অধ্যায় -লোক প্রকৃতি
যখন আলাউদ্দীন হুসেন শাহ (১৪৯৩-১৫ CE) গৌড়-বাংলার সুলতান, তখন উীঁড়ষ্যায় রাজত্ব করছেন প্রতাপরুদ্রদেব--যাঁর রাজত্ব- কালে মহাপ্রভু চৈতন্যদেব পুরী ভ্রমণ করেন । চৈতন্যদেবের উঁড়ষ্যা থেকে মেদিনীপুর হয়ে রূপনারার়ণ নদ পেরিয়ে বাংলায় আসার সময়কার হাওড়ার অবস্থার কিছুটা পাঁরচরর় পাওয়া যায় । তবে ওদ্র দেশ সামা প্রভু চলি আইলা । তথা রাজ-আঁধকারী প্রভুরে 'মাললা ॥ দিন দুই চার তেহোঁ করিল সেবন। আগে চলিবারে সেই কহে বিবরণ ॥ মদ্যপ ষবন রাঙজার আগে আধকার । তার ভয়ে পথে কেহ নারে চাঁলবার ॥ পছলদা পর্যন্ত সব তার আঁধকার । তার ভয়ে নদী কেহ হৈতে নারে পার ॥। দিন কত রহ সাম্ধ কার তার সনে। তবে সুখে নৌকাতে করাইব গ্মনে ॥
You must be logged in to post a comment.